সকাল নারায়ণগঞ্জ:
২০২২-২৩ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে কর্মসংস্থান শূণ্য ও মালিক তোষণের বাজেট হিসাবে অভিহিত করে তা বাতিল এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও শ্রমিকের জন্য রেশন, আবাসন ও চিকিৎসা খাতে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আজ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সহসভাপতি এম এ মিল্টন, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদিরা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে ২৪৩৭১০ কোটি টাকা আয় হবে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক আর সম্পুরক শুল্ক থেকে। অর্থাৎ সরকারের আয়ের প্রায় ৩৬ শতাংশ বোঝা বহন করবে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষ আর পেনশন-গ্রাচ্যুয়টিসহ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যায় হবে বাজেটের ৩৫ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তিৃতায় সার্বজনীন পেনশন স্কীম চালু করার কথা বলেছেন। সামাজিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। অথচ সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, প্রণোদনা ঋনের সুদের ভর্তুকি যুক্ত করে সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ বড় করে দেখিয়েছেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতের প্রকৃত বরাদ্দ ০.৬৩ শতাংশ। সার্বজনীন পেনশন স্কীম খাতে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি।
আর ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের শ্রমঅধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রাপ্ত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ১ কোটি ৩০ লক্ষ প্রবাসীদের কল্যানের দায়িত্বের প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় শিল্পের বিকাশের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয় এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় ৪৬৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। সকল শ্রমজীবী মানুষের সুরক্ষায় শ্রম আইনের প্রয়োগ, রাষ্ট্রীয় শিল্পের বিকাশ কিংবা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শোভন কর্মসংস্থানের উদ্যোগ সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় না রেখে সবচেয়ে গুরত্বহীন হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মোট বাজেটের মাত্র ০.৬ শতাংশ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সম্প্রতিক সময়ে টাকার মান ১০ শতাংশের বেশি কমানো হয়েছে, কিছু কিছু নিত্যপণ্যের দাম প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে তার বিপরীতে শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে, রাষ্ট্রীয় কলকারখানা বন্ধ করে দিয়ে ব্যাক্তিগত মালিকদের সস্তায় শ্রম লুট করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে, ্ৈবষম্য কমানোর জন্য ধনীদের উপর বাড়তি ট্যাক্স আরোপের পরিবর্তে তাদের ট্যাক্সের পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা হিসাবে প্রদানকৃত চালের দাম কেজি প্রতি ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থাৎ প্রস্তাবিত বাজেট কথার মারপ্যাঁচে শ্রমজীবী মানুষের পকেট কেটে ধনীদের সুবিধা দেওয়ার দলিল। এই বাজেটে উৎপাদনের প্রধান অংশীদার শ্রমিকদের ন্যূনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য ভর্তুকি মূল্যে রেশন, বিনামূল্যে চিকিৎসা, স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যকর আবাসন এবং চাকরির অবসানে সুরক্ষার দাবির কেনো প্রতিফলন নেই। নেতৃবৃন্দ, এস.ডি.জি’র লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রæতি পুরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেট প্রণয়নের দাবি জানিয়ে প্রশ্ন রাখেন, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী না করে, শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে অর্থমন্ত্রী কিভাবে এস.ডি.জি’র ক্ষুধা মুক্ত, দরিদ্রতা মুক্ত কিংবা সবার জন্য শোভন কাজের নিশ্চয়তার মত লক্ষ্যগুলি অর্জন করবেন।