রাজধানীর শাহ আলী ও মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকা হতে সংঘবদ্ধ নারীপাচারকারী চক্রের ০২ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তিও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিককালে প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে উচ্চ বেতনে লোভনীয় চাকুরীর প্রলোভনে নারী পাচারে জড়িত রয়েছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এসব ঘৃণিত মানবপাচারকারী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর শাহআলী এবং মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পাসপোর্ট, ভিসা কার্ড এবং ০২ টি মোবাইলসহ সংঘবদ্ধ নারীপাচারকারী চক্রের ০২ সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, তানিয়া আক্তার @ কাজল (৩০), জেলা- মুন্সিগঞ্জ ও বিথি আক্তার (২৫), জেলা- মুন্সিগঞ্জ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকারীরা পাচারকারী চক্রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে তথ্য প্রদান করেছে। এই চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নারী ও তরুণীদেরকে পাচার করত। তারা পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নারীদেরকে পাচার করত। তাদের মূল টার্গেট ছিল দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত তরুণী। দেশে ২০-২৫ জন এই চক্রের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। উক্ত চক্রটি প্রথমে দেশের বিভিন্ন দরিদ্র ও অসহায় তরুণী মেয়েদের টার্গেট করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণী মেয়েদের সাথে পরিচিত হয়ে তাদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদ্বয় উক্ত তরুনী মেয়েদেরকে দেশের বাহিরে সহজে অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্নভাবে তাদের প্রলোভন দেখায়। প্রথমে ধৃত আসামীদ্বয় বিভিন্ন স্থান হতে তরুণীদের একত্র করে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের সহযোগীদের নিকট হস্তান্তর করে। উক্ত ভুক্তভোগী তরুণীদেরকে নগদ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন লোকজনের সাথে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করানো হয় এবং সুবিধাজনক সময়ে স্থলপথে অরক্ষিত অঞ্চল দিয়ে পাচার করে থাকে মর্মে জানা যায়। পরবর্তীতে তাদেরকে পার্শ্ববর্তী দেশের পশ্চিমাঞ্চলসহ অন্যান্য অন্যান্য এলাকার নিষিদ্ধ পল্লীতে অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিতো এবং বাধ্যতামূলকভাবে অনৈতিক কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই ভিকটিমদের পাচার করা হত বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। চক্রটি রাজধানী ঢাকার এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার বেশকয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ধৃত আসামীদ্বয় একজন তরুণীকে মিরপুর হতে একটি ভাড়াকৃত প্রাইভেটকার যোগে ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে যায়। অতঃপর সুবিধাজনক সময়ে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের ভিকটিমকে পর ভিকটিমকে পার্শ্ববর্তী দেশে তাদের এজেন্টের নিকট হস্তান্তর করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা জানায় জনপ্রতি ১ লাখের অধিক টাকায় প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে পার্শ্ববর্তী দেশের দালালের নিকট বিক্রি করত।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং এ নারী পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র্যাবের জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।