সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
স্টাফ রিপোর্টার (আশিক):
রাজধানীর মিরপুর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশি ও বিদেশী সংস্থার ভূয়া প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে কথিত তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক @ বিশিষ্ট আলোচক @ ডিপ্লোম্যাট @ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল @ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতা (আইপিসি)’কে সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সাম্প্রতিক সময়ে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম সক্রিয় রয়েছে। ভার্চুয়াল জগত ব্যবহারের মাধ্যমে মিথ্যাচার, বিভ্রান্তি ছড়ানো, অপপ্রচার রোধকল্পে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে র্যাব। র্যাব সাইবার মনিটরিং টিমের অনুসন্ধানে জানতে পারে যে, একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি বা চক্র ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচার/প্রচারণার মাধ্যমে নিজেকে খ্যাতিমান হিসেবে অধিস্থিত করে নানাবিধি অবৈধ অপরাধ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছে। সূদুর প্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে অপরাধীরা নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অপব্যবহার করছে। ফলশ্রুতিতে এতদ্সংক্রান্ত বিষয়ে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী ও অনুসন্ধান অব্যাহত রাখে।
সম্প্রতি র্যাবের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে ভিন্নধর্মী একটি প্রতারণা সম্পর্কে তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। যেখানে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের বা নিজেদের গগনচুম্বী ভূয়া সাফল্য ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। অনুসন্ধানে উদ্ঘাটিত হয় এ জাতীয় মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর অভিযানে রোববার (১ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ৯ টায় রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন মিরপুর-১ হতে কথিত তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক @ বিশিষ্ট আলোচক @ ডিপ্লোম্যাট @ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল @ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতা(আইপিসি), পিতা- খন্দকার রফিকুল ইসলাম, কাফরুল, ঢাকা এবং তার সহযোগী মোঃ শহিদুল ইসলাম ওরফে দিদার, পিতা- মোঃ হুমায়ন কবীর, দোহার, ঢাকা’কে গ্রেফতার করা হয়।উক্ত অভিযানের উদ্ধার করা হয়, ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সীল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০পিছ ইয়াবা, ০৫ বোতল বিদেশী মদ এবং মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত ইশরাত রফিক ঈশিতা পেশায় একজন চিকিৎসক। যিনি বিভিন্ন মাধ্যমে একজন আলোচক, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, গবেষক, পিএইচডি সম্পন্ন, মানবাধিকার কর্মী, সংগঠক, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল পদ মর্যাদার এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন বলে ভূয়া পরিচয় প্রদান করে থাকেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়,বর্ণিত ভূয়া পরিচয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তিনি ভূয়া নথিপত্র তৈরী ও প্রচার প্রচারণা করে থাকেন। তিনি ময়মনসিংহে অবস্থিত একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হতে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-২০০৬) এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। অতঃপর জুন ২০১৪ সালের প্রথম দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর ২০১৪ সালে তিনি একটি সরকারী সংস্থায় চুক্তি ভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে ০৪ মাস চাকুরী করার পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকুরীচ্যুত হন।
গ্রেফতারকৃত ইশরাত রফিক ঈশিতা চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ; চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তার ভূয়া বিশেষজ্ঞ ডিগ্রীগুলো যথাক্রমে-এমপিএইচ, এমডি, ডিও ইত্যাদি। এছাড়া ভুয়া ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বিভিন্ন মতবাদ প্রচার করে থাকেন। গ্রেফতারকৃত বিভিন্ন সাইটে চিকিৎসা শাস্ত্রে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, আর্টিকেল বা থিসিস পেপার প্রকাশনা করেছেন তন্মধ্যে; Health problems and health care seeking behavior of street children in Dhaka City, Perception regarding acute respiratory tract infection among mothers of under five children ইত্যাদি।তিনি মূলত অনলাইনে প্রাপ্ত বিভিন্ন গবেষণাধর্মী প্রকাশনা এডিট করে বর্ণিত গবেষণাধর্মী প্রকাশনা প্রস্তুত করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত ইশরাত রফিক ঈশিতা জানান তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিদেশে প্রাপ্ত ভূয়া সাফল্য স্বীকৃতের প্রচারণা করতেন। ২০২০ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে হোটেল পার্ক অ্যাসেন্টে অনুষ্ঠিত জিআইএসআর ফাউন্ডেশনের প্রদত্ত ইন্টারন্যাশনাল ইন্সপিরেশনাল ওমেন অ্যাওয়ার্ড (আইআইডব্লিউ ২০২০) পেয়েছেন। যা ৩৫ বছর বয়সী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে “বছরের সেরা নারী বিজ্ঞানী” হিসেবে পুরস্কার। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, ভারতের ‘টেস্ট জেম অ্যাওয়ার্ড ২০২০’; থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে অংশ নিয়ে ‘আউটষ্ট্যান্ডিং সায়েন্টিষ্ট এন্ড রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড’ইত্যাদি। তিনি জানান যে, তিনি প্রতারণার মাধ্যমে ভূয়া নথি উপস্থাপন করে২০১৮ সালে জার্মানীতে ‘লিন্ডা ও নোবেল লরিয়েট মিট-মেডিসিনে’ অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রচারণা করেন যে, তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বর্ণিত অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এছাড়া তিনি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বিভিন্ন সংগঠন যথাক্রমে আমেরিকান সেক্সুয়াল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল সার্ভিকাল ক্যান্সার কোয়ালিশন এবং গ্লোবাল গুডউইল ইত্যাদি হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছেন। তিনি অ্যাওয়ার্ড বিষয়ক অনুষ্ঠানে উপস্থিতির এডিটিং করা ভূয়া ছবি ও সনদ তৈরী করে গণমাধ্যমে প্রেরণ ও ভার্চুয়াল জগতে প্রচারণা করতেন।
গ্রেফতারকৃত ইশরাত রফিক ঈশিতা করোনা মহামারীকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় সক্রিয় ছিলেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচক ও প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।