সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
স্টাফ রিপোর্টার (আশিক)
ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় আলোচিত খাদেম নজরুলের পায়ের রগ কাটা মামলার প্রধান আসামী কিশোর গ্যাং ‘রাকিব গ্রুপ’ এর প্রধান রাকিব ও সহযোগী ইমনকে সাভার ও আশুলিয়া থেকে বিদেশী পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। খুন, ডাকাতি, দস্যুতা, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার এবং জঙ্গীবাদের মত ঘৃণ্যতম অপরাধ নির্মূল ও রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার সহ নেশার মরণ ছোবল থেকে তরুন সমাজকে রক্ষা করার জন্য র্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। বর্তমানে রাজধানীতে বহুল আলোচিত বিপদগামী কিশোর গ্যাং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী, চাদাবাজী, ছিনতাই, নারীদের ইভটিজিংসহ মাদক সেবন ও ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের বিপথগামী কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।
গত ২৪ জুন আশুলিয়া থানাধীন নাল্লাপাড়া এলাকায় মসজিদের খাদেম মোঃ নজরুল ইসলাম তার ঋণের ৩০,০০০/-টাকা পরিশোধ করার জন্য সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হলে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার সময় আশুলিয়া থানাধীন নৈহাটি মসজিদের পাশে পৌঁছানো মাত্রই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মূল পরিকল্পনাকারী আলিম (৪০) এর ইন্ধনে কিশোর গ্যাং রাকিব গ্রুপ এর লিডার রাকিব হোসেন এবং তার সহযোগী ইমন হোসেন তাদের হাতে থাকা ধারালো চাপাতি ও চাকু নিয়ে খাদেমের পথ রোধ করে এলোপাথারিভাবে মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাকিব হোসেন তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্য খাদেমের মাথায় কোপ দিলে ভিকটিম প্রাণ রক্ষার্থে সরে গেলে উক্ত কোপ ভিকটিমের বাম পায়ের গোড়ালিতে লেগে রগ কেটে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। আসামী রাকিব ও ইমন তাদের হাতে থাকা ছোড়া দিয়ে ভিকটিমের পায়ের রগ কাটাসহ শরীরের বিভিন্ন যায়গায় গুরুতর জখম করে। আসামী রাকিব হোসেন খাদেমের সাথে থাকা ৩০,০০০/-টাকা ছিনিয়ে নেয়। খাদেমের ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামীদ্বয় প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে উপস্থিত লোকজন সাভারের নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী আশুলিয়া থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-৫৩, তারিখঃ ২৫-০৫-২১, দন্ডবিধির-১৮৬০ এর ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯, ৫০৬ ধারা। উক্ত খাদেমের পায়ের রগ কাটার সংবাদটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রচার হলে দেশব্যাপী ব্যাপক ভীতি ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরই পাশাপাশি এলাকার লোকজন কিশোর গ্যাং প্রধান রাকিব ও ইমনের গ্রেফতারের প্রতিবাদে জোরালোভাবে মিটিং মিছিল এবং মানববন্ধন করে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৪ উক্ত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার (২৮ জুন) ভোর ৩টা ১০ থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন হেমায়েতপুর এবং আশুলিয়া থানাধীন নাল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ০২ টি পিস্তল, ০১ টি ম্যাগাজিন, ০৪ রাউন্ড গুলি, ০১ টি চাইনিজ কুড়াল, ০২ টি ফোল্ডিং চাকু ০১ টি চাপাতি এবং ৩০০ পিস ইয়াবাসহ এজাহারনামীয় আসামীদ্বয়কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ রাকিব হোসেন (২২), জেলা- ঢাকা ও ইমন হোসেন (২০), জেলা- ঢাকা।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।
তারা জানায় যে, গত ২৪ জুন ভিকটিমের পায়ের রগ কেটে গুরুতর জখম করে এলাকায় আত্মগোপন করে। অতঃপর তারা আত্মগোপনে থেকে গত ২৮/০৫/২০২১ তারিখ ঢাকা হয়ে কক্সবাজার চলে যায়। কক্সবাজারে তারা দীর্ঘ ০১ মাস আত্মগোপনে ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে রাকিব জানায় যে, সে পলাতক আসামী আলিম এর ইন্ধনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বামপায়ের গোড়ালিতে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত কাটা জখম করে এবং ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সে ভিকটিমের সাথে থাকা ৩০,০০০/- টাকা ছিনিয়ে নেয়। অপর আসামী ইমন জানায় যে, সে ভিকটিমকে তার সাথে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে ডানপায়ের উরুতে পোচ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আরো জানা যায় যে, সহযোগী ইমনসহ রাকিবের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের কিশোর গ্যাং গ্রুপ সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ইভ-টিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এলাকার নিরীহ জনগণ অতিষ্ট এবং সর্বদা আতঙ্কের মাঝে থাকতো।
গ্রেফতারকৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতারে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে।