সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়া এলাকায় শতবর্ষ পুরনো ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদের জমি সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করে উক্ত স্কুলের নতুন ভবন এবং মসজিদটি পূর্ণ নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
সোমবার ১৫জুন বিকেল ৪টায় উক্ত পাইকপাড়া বালক বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাইকপাড়া জামে মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধানে প্রধান অতিথি হিসেবে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধন করেন। সেখানে স্কুল এবং মসজিদের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিতে এমপি সেলিম ওসমান বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে জমির রেজিস্ট্রি কাজ সম্পন্ন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিরিক্ত লোকজনকে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করতে এবং সীমিত সংখ্যক লোককে চেয়ারে নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রেখে বসার অনুরোধ জানিয়ে মাইকে ঘোষণা দেন এমপি সেলিম ওসমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, পাইকপাড়া এলাকার অনেক ইতিহাস আছে। যায় দিন ভাল যায়। কাজ করতে গেলে ভূল হতেই পারে। সামনের দিন গুলো গুছিয়ে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। আমি নির্বাচনের সময় একটি দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছি। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমি নিরপেক্ষ ভাবে উন্নয়নের কাজ করে গিয়েছি। আমি নারায়ণগঞ্জের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে কাজ করেছি। আজকে এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় কাউন্সিলর উপস্থিত না থাকায় আমি কষ্ট পেয়েছি। বক্তরা বক্তব্যে বলে গেলেন স্কুলে যাতায়াত করতে শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। কারন যাতায়াতের রাস্তাটি অত্যন্ত খারাপ। আমি কাউন্সিলদের দৃষ্টি আকর্ষন করে অনুরোধ করবো যাতে করে মেয়রের সাথে আলোচনা করে দ্রæত রাস্তাটি ঠিক করার ব্যবস্থা করা হয়। অন্যথায় মেয়রের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তাটি করতে চাই। এ জন্য আমি এলাকার সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।
পাইকপাড়া বালক বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অদূরে অবস্থিত জয় গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি চেয়ে ছিলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ এবং জয়গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজটি একসাথে শুরু করতে। কিন্তু স্কুলটির ভবন নির্মাণ কাজের পায়েলিং কাজের অনুমোদন না পাওয়ায় কাজটি আটকে রয়েছে। এটা দ্রæত চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। নিজের অর্থায়নে অনেক গুলো স্কুল নির্মাণ করেছি। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর সাথে আমার সরাসরি যোগযোগ রয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে আজকে আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রয়েছে। সব কিছু খুলে দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেওয়া হয়নি। কবে খোলা সম্ভব হতে তাও জানি না। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষার্থীরা যাতে সুস্থ্য থাকেন সেই দিকে প্রতিটি অভিভাবকদের নজর দিতে হবে। ১৯৭১ সালে আমরা ৯ মাস লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু তাতে আমরা সবাই অশিক্ষিত থাকিনা। বর্তমান পরিস্থিতি আমরা এক সময় কাটিয়ে উঠবো। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা নিজ নিজ সন্তানদের সুস্থ্য রাখতে বিশেষ নজর দিবেন।
তিনি আরো বলেন, আমি যে দলেই থাকিনা কেন আমার একটাই পরিচয়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর কন্যা যতদিন বেঁচে আছেন আমি শুধুমাত্র উনার দিক নিদের্শনা মেনেই কাজ করে যাবো।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার লক্ষ্যে তিনি সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পাইকপাড়া সহ প্রতিটি এলাকায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও জনসচেতন কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন ৭মার্চ ভাষনে আমরা যেমন উদ্বৃত্ত হয়ে প্রতিটি গ্রাম মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলে ছিলাম। একই ভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় প্রতিটি এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে এবং এই পাইকপাড়া থেকেই যেন এটা শুরু করা হয়। এভাবে করোনার বিরদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমাদেরকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার ভূমিকা পালন করতে হবে।
সেই সাথে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা ৯মাস আমাদের শত্রæদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। তখন আমাদের শত্রæ ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার আলবদররা। এখন ঠিক তেমনি একটি যুদ্ধ চলছে। আর এখন আমাদের শত্রæ হলো একটি অদৃশ্য ভাইরাস। এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমাদের নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, জীবানুনাশক ব্যবহার করতে হবে। নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আগে বিশ্বে মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অস্ত্র বানিয়েছে শক্তি প্রদর্শনের জন্য। এখন হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে একটি ওষুধ বানাতে পারছে না। মানুষের লোভ, ক্ষমতার দম্ভ, হিংসা, হানাহানি এসবের কারনেই হয়তো আমাদের শিক্ষা দিতে আল্লাহ এমন ভাইরাস দিয়েছে। আপনারা যার যার অবস্থান থেকে অসহায় মানুষদের সহযোগীতা করেন। তাদের পাশে দাড়ান। মানুষের মাঝেই আল্লাহ বসবাস করেন। মানুষকে সেবা করার মধ্যদিয়ে আল্লাহকে খুশি করতে পারলে হয়তো আমাদের এই ভাইরাস থেকে মাফ করবেন। যে কোন ভাবে আমি জানতে পেরেছি এই পাইপপাড়া এলাকায় প্রায় ৬০০ শিশু বাচ্চা রয়েছে যারা দুধ খেতে পারছে না। আমি এলাকার বিত্তশালীদের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি আপনারা সেই সকল শিশুদের জন্য সহযোগীতা করেন। তাদের দুধ খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই করোনা মহামারিকালে পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছেন। সারাদেশে অনেক পুলিশ আক্রান্ত হয়েছেন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। অনেকে মারা গেছেন। আক্রান্তরা সুস্থ্য হয়ে ফিরে আবারো কাজে যোগ দিয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিকেরা অনেক ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন। তারা যদি এসব তথ্য তুলে না ধরতো তাহলে করোনা সম্পর্কে আমরা এতোকিছু জানতে পারতাম না। মানুষ সচেতন হতে পারতো না। তাই আমি পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি আরো বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জে একের পর এক ডাক্তার আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ডাক্তার ও নার্স এবং ওয়ার্ডবয়দের থাকার কোন জায়গা ছিলনা। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বার একাডেমী স্কুলে প্রায় ১০০জন নার্স ওয়ার্ডবয়দের অস্থায়ী আবাসনের মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করি। সেই সাথে ডাক্তার নার্স সহ প্রায় ১৫০জনের তিনবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করি। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা নিয়ে আমরা খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারী ভাবে একটি পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন কা হয়েছে। আরো কিছু উন্নয়নের চেষ্টা করছি এজন্য আমি চিকিৎসক সহ সংশ্লিষ্ট সহযোগীতা কামনা করছি।
পাইকপাড়া বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নাহিদা বেগম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, পাইকপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, পাইকপাড়া বালক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনিস আহম্মেদ, পাইকপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসকে ওয়াজিদ আলী বাবুল। আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, সহ স্থানীয় নেত্রীবৃন্দ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, আজকের এই দিনটি আমাদের পাইকপাড়াবাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আজকে স্কুল ও মসজিদের কাজের উদ্বোধন হচ্ছে। এটা এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী ছিলো। যখন আমরা দুটি প্রতিষ্ঠানের কমিটির নেতৃবৃন্দরা দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আশা ছেড়ে দিয়ে এমপি সেলিম ওসমানকে বিষয়টি অবহিত করেছি তখন তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে কাজটি সম্ভব করেছেন। আমাদের অজান্তে নিজের পকেট থেকেও টাকা খরচ করেছেন। আমরা পাইকপাড়া বাসী তাঁর কাছে ঋনী হয়ে থাকবো। এমপি সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যে ভূমিকা রেখে চলেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা উনার কাছে নারায়ণগঞ্জে একটি উন্নত মানের বিশ্ব বিদ্যালয় নির্মানের দাবী রাখছি।
সভাপতির বক্তব্যে নাহিদা বেগম বলেন, আজকে এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে পাইকপাড়ায় নতুন ইতিহাস রচিত হলো। স্কুলটি নিয়ে গত ৩৩ বছর ধরে যুদ্ধ করে এসেছি আজকে এমপি সেলিম ওসমানের সহযোগীতায় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।