সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন ডেস্কঃ
প্রবাসী ভাইবোনদের পক্ষ থেকে অনেক প্রশ্ন এসেছে– তারা কীভাবে ফিতরা আদায় করবেন?
এখানে মূলত দুটি বিষয়–
এক. প্রবাসীরা ফিতরার পরিমাণ নির্ণয় করবেন কোন দেশের পণ্য ও মুদ্রা হিসেবে? নিজের অবস্থানের দেশের হিসাবে? নাকি নিজের মাতৃভূমির হিসাবে?
দুই. তারা ফিতরা দেবেন কাদেরকে? অবস্থানের দেশের অভাবীদের? নাকি মাতৃভূমির অভাবীদের?
প্রথম প্রশ্নের জবাব
প্রবাসীরা হিসাব করবেন অবস্থানের দেশের পণ্য ও মুদ্রার হিসাবে। এ বিষয়ে ফতোয়া শামী তৃতীয় খণ্ডের ৩০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে– ফিতরার ক্ষেত্রে আদায়কারীর অবস্থান গ্রহণযোগ্য, যাদের পক্ষ থেকে দিচ্ছেন তাদের অবস্থান নয়।
এই মত ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর এবং এটিই বিশুদ্ধ মত। কারণ যাদের পক্ষ থেকে তিনি আদায় করছেন, তারা আদায়কারীর অনুগত।
এর পর এ বিষয়ে হজরত ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহর এখতেলাফ উল্লেখের পর সারাংশে বলা হয়েছে– (ইবনে আবেদীন শামী বলেন) কিন্তু ফাতাওয়া তাতারখানিয়ায় আছে, সবার পক্ষ থেকে সেখানেই আদায় করবেন, যেখানে আদায়কারী অবস্থান করছেন।
এই মতটির ওপর ফতোয়া। এটিই ইমাম মোহাম্মদ (রহ.) এর মত। ইমাম আবু হানিফার মতও এ রকমই এবং এটিই বিশুদ্ধতম মত।
উপরোক্ত আলোচনা মৌলিকভাবে এ কথাই বোঝায় যে, জাকাত ও ফিতরা আদায়কারী যেখানে সম্পদ অর্জন করছেন, সেখানের হিসাবই ধর্তব্য। সেখানে দেয়াই ছিল মূল নিয়ম। দেশে আদায় করার বিষয়টি তাদের অতিরিক্ত চিন্তা। দেশের চিন্তা বাদ দিলে তারা সে দেশের পণ্য এবং মুদ্রায় জাকাত-ফিতরা প্রদান করতেন।
বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ফাতাওয়া শামীর তৃতীয় খণ্ডের ৩০৬ নং পৃষ্ঠায়।
সেখানে জাকাতের আলোচনায় বলা হয়েছে– যেখানে সম্পদ অর্জন হয় সেখানের ফকিরদের জাকাত দিতে হয়।
জাকাতদাতা যদি এক শহরে বসবাস করেন আর তার ব্যবসা চলে অন্য শহরে।
তা হলে ব্যবসার শহরেই তার জাকাত আদায় করতে হবে। যদি তার অবস্থানের শহরে জাকাত আদায় করেন তা হলে মাকরুহ হবে।
কারণ তাদের বক্তব্য হচ্ছে– সম্পদ আহরণের স্থানই ধর্তব্য। এমনকি সম্পদের ওপর জাকাত যখন ফরজ হয়, সেই সময়টি ধর্তব্য, জাকাত আদায়ের সময় ধর্তব্য নয়।
আর সম্পদের ওপর যে শহরে জাকাত ফরজ হয়, সেই শহরের দরিদ্রদের অধিকার যুক্ত হয়ে যায়।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে প্রবাসীদের সম্পদ আহরণের স্থানটা ধর্তব্য বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রবাসীদের স্থানের দ্রব্য ও মুদ্রামূল্য হিসাব করলে দরিদ্রদের উপকার বেশি, যা একটি মূলনীতি।
ফাতাওয়ায়ে রাহিমিয়ার ৭ নম্বর খণ্ড ১৯৫ পৃষ্ঠায় এই কথাটাই বলা হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনায় এদিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, প্রবাসীরা তাদের অবস্থানের পণ্য ও মুদ্রার মূল্যে জাকাত ও ফিতরা নির্ধারণ করবেন। এবং এ কথা সুস্পষ্ট যে তাদের অবস্থানের দরিদ্রদের জাকাত-ফিতরা দেবেন। এবং এটি আসলে মূলনীতি।
কিন্তু আমরা মাতৃভূমিতে জাকাত-ফিতরা দিতে উদ্বুদ্ধ করি কেন?
এই মর্মে ফাতাওয়া শামীর তৃতীয় খণ্ডের ৩০৪ নং পৃষ্ঠায় আছে– জাকাতের সম্পদ স্থানান্তর করা মাকরুহ। তবে ৫ কারণে মাকরুহ হবে না।
প্রথমত আত্মীয়দের দেয়ার জন্য। এমনকি জহিরিয়া গ্রন্থে আছে– আত্মীয়স্বজনের প্রয়োজন সত্ত্বেও বাহিরে দানকারীর সদকা কবুল হবে না, যতক্ষণ না তাদের প্রয়োজন পূরণ করবে।
দ্বিতীয়ত অধিক প্রয়োজনবোধের কারণে। গ্রহীতার জন্য যদি পরম কল্যাণকর হয় অথবা তিনি পরম খোদাভীরু হন অথবা তিনি মুসলিম সমাজের কল্যাণে বেশি অবদান রাখেন।
তৃতীয়ত কাফের রাষ্ট্র থেকে মুসলিম রাষ্ট্রের প্রেরণের উদ্দেশ্যে।
চতুর্থত তালেবে এলেম বা ইসলামী জ্ঞান আহরণকারীর উদ্দেশ্যে পাঠানো হলে। আল মেরাজ গ্রন্থে আছে– অভাবী আলেমকে দান করা উত্তম।
পঞ্চমত ধর্মীয় কারণে সংসারে সময় দিতে পারছেন না এমন দুনিয়া ত্যাগীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো হলে।
আলোচ্য কারণসমূহ আমলে নিয়েই আমরা প্রবাসীদের মাতৃভূমিতে জাকাত-ফিতরা পাঠাতে বলি।