সকাল নারায়ণগঞ্জ :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দ্বন্দ্বের জেরে হোসিয়ারি শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।
গত ২০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন শিয়াচর সাকিনস্থ বুড়ির গ্যারেজ সংলগ্ন বালুর মাঠে পূর্ব দ্বন্দ্বের জেরে এক কিশোর শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় নিহত ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-৩৮, ধারা- ১৪৩/১৪৮/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩০২ /৫০৬/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের কে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
ঘটনা সূত্র ও এজাহার পর্যালোচনায় জানা যায় যে, নিহত ভিকটিম সিয়াম (১৮) ফতুল্লা থানাধীন পিলকুনী পেয়ারাবাগনস্থ একটি হোসিয়ারী কারখানায় চাকরি করত। গত ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার হওয়ায় ভিকটিম সিয়াম এর হোসিয়ারী কারখানা বন্ধ থাকায় সে সারাদিন বাড়িতেই ছিল, সন্ধ্যার পর ভিকটিম তার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যায়। গত ২০ ডিসেম্বর রাত অনুমান সাড়ে ৯টার সময় ভিকটিম সিয়াম (১৮) সহ তার বন্ধুরা ফতুল্লা থানাধীন শিয়াচর সাকিনস্থ বুড়ির গ্যারেজ সংলগ্ন বালুর মাঠে বসে গল্প গুজব করার সময় পূর্ব শত্রুতার জেরে এজাহারে উল্লেখিত আসামীগণ সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন প্রত্যেকে হাতে ছোরা, চাকু, সুইচ গিয়ার চাইনিজ কুড়াল, রামদা, বগিদা, লাঠি সোঠা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বে-আইনী জনতাবদ্ধে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে একই উদ্দেশ্যে ভিকটিম সিয়াম ও তার বন্ধু সোবহান (২০) এবং মিলন (১৮) কে অতর্কিত ভাবে আক্রমন করে। একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিম সিয়াম (১৮) কে মারপিট ও টানা হেচড়া করতে করতে উক্ত বালুর মাঠের পূর্ব পাশে নিয়া এলোপাতাড়ী মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে ১নং আসামীর হাতে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে ভিকটিম সিয়াম এর ডান কুচ্চিতে আঘাত করে গভীর ক্ষতবিশিষ্ট গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে এবং অন্যান্য আসামীগণ সহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা ভিকটিমকে উপর্যুপুরী পিটিয়ে ভিকটিমের পিঠে, দুই হাতে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফোলা ও রক্ত জমাট জখম করে। আসামীরা ভিকটিমের বন্ধু সোবহান (২০) ও মিলন (১৮) দ্বয়কে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ী পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদেরকে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম ও তার বন্ধুদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামীরা ভিকটিম ও তার বন্ধুদেরকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও জীবন নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের বন্ধুরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিম সিয়ামকে চিকিৎসার জন্য খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়া গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গত ২০ ডিসেম্বর তারিখ রাত্র অনুমান পৌনে ১১টার সময় ভিকটিম সিয়াম কে মৃত ঘোষনা করে। সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের বাবা ও মা’সহ তার আত্মীয় স্বজন খানপুর হাসপাতালে গিয়ে ভিকটিম সিয়াম এর লাশ সনাক্ত করে এবং ভিকটিম সিয়াম এর ডান হাতের কনুইতে ছিলা ও কবজিতে আচরের দাগ, পিঠের মাঝ বরাবর ছিলা দাগ এবং ডান কুচ্চিতে ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষতবিশিষ্ট কাটা জখম দেখতে পান। সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য জেনালের হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া, নারায়ণগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। ভিকটিমের বন্ধু মিলন গুরুতর জখম অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
পরবর্তীতে নিহত ভিকটিমের বাবা মোঃ হালিম খান (৫৩) বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৩৮, ধারা- ১৪৩/১৪৮/৩২৩/ ৩২৬/৩০৭/৩০২/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকে পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১১, সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত এজাহারনামীয় ৩ নং পলাতক আসামীকেনারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন ভূইগড় কাজীবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে সাড়ে ১১টায় সিপিসি-১, নারায়ণগঞ্জ এর আভিযানিক দল আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এজাহারনামীয় ৩ নং পলাতক আসামী নিলয় (২৬) নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন শিয়াচর লালখা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।