সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
ফতুল্লায় মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান( ডাইং ফ্যাক্টরি) দখলের চেষ্টা ও হুমকির অভিযোগ তুলেছেন হাসনাত জাহান রুনু নামে এক বিধবা নারী।
রবিবার(১৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন তার বড় মেয়ে মেহেজাবিন রহমান সিনহা, বড় ছেলে হাসিবুর রহমান শাফিন, মেঝ ছেলে হুদাইফা রহমান প্রত্যয় এবং ছোট ছেলে রেদোয়ার রহমান আহনাফ, কারখানার নতুন ভাড়াটে ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জনি ও তার অংশীদার এম এম দীপু।
সংবাদ
সম্মেলনে হাসনাত জাহান রুনু জানান, সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কুতুবআইল
এলাকায় এ আর নীট কম্পোজিট নামে একটি ডাইং কারখানা রয়েছে তার স্বামী মৃত
মজিবুর রহমান সোহেলের নামে। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার কারখানাটি শাহাদাৎ
হোসেন বাচ্চু নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেয়ার জন্য
প্রথমে মৌখিক চুক্তি করেন। পরে লিখিত চুক্তি করতে চাইলে বাচ্চু তাকে
নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন এবং মাসিক ভাড়া দেয়া বন্ধ করে গ্যাস ও বিদ্যুৎ
বিলের বকেয়া পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ভাড়া চাইতে গেলে ভাড়াটিয়া
বাচ্চু তাকে মারধরও করে। এ ঘটনার কয়েকদিন পর হুমকির ভয়ে ও মানসিক যন্ত্রনায়
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মজিবুর রহমান সোহেল মারা যান।স্বামীর মৃত্যুর পর
আর্থিক সংকটের কারণে হাসনাত জাহান রুনু ভাড়াটে বাচ্চুকে বাদ দিয়ে স্থানীয়
ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জনির কাছে কারখানাটি নতুন করে ভাড়া দেন। অভিযুক্ত
বাচ্চু অন্যজনের ১০টি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে
কারাগারে রয়েছেন। তবে এ ঘটনা জানতে পেরে অভিযুক্ত বাচ্চু স্থানীয়
সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নতুন ভাড়াটে জনিকে ওই কারখানা পরিচালনায় বাধা দেয়াসহ
আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় আমি আমার নাবালক চারটি
সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি ও আমার সন্তানরা
ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। একপ্রকার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি। সন্তানদের
লেখাপড়াও বন্ধ হবার পথে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ও ফতুল্লা থানা ও নারায়ণগঞ্জ
চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কারো কোন সহযোগিতা
পাচ্ছি না। বাধ্য হয়েই আজকে আমি চার সন্তানকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের
আশ্রয় নিয়েছি।
এসময় রুনু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এর
আগে এই ঘটনা সম্পর্কে পাল্টা অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ
সম্মেলন করেন অভিযুক্ত শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। তার
সাথে ছিলেন তার ভাই সুলতান মাহমুদ। তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকের
ভাড়ার বৈধ চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে তারা একটি চক্তিপত্র দেখান। যেখানে
সাক্ষী হিসেবে নিজেদের লোকজন ছাড়া সোহেলের পক্ষে কারো কোনো স্বাক্ষর ছিলো
না। এমনকি চুক্তিপত্রটি যে তারা নিজেরাই করেছেন সেটিও স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও
একই সময়ে এই চক্রের সাথে সাঞ্জনা আল আবেদীন নামে এক কলেজ ছাত্রী ও তার মা
উপস্থিত থেকে ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জনির বিরুদ্ধে ৭১ শতাংশ ভূমি দখলের
অভিযোগ তুলেন। তাদের দাবি, এই ৭১ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ বিশু নামে এক
ব্যক্তির কাছ থেকে কাচা বায়নাতে এবং ৪১ শতাংশ আক্তার হোসেন নামে অপর এক
ব্যক্তির কাছ থেকে তার পাওয়ার নিয়েছেন। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো রকম
দালিলিক প্রমাণও তারা দেখাতে পারেননি। ফলে উভয় পক্ষই সাংবাদিকদের নানা
প্রশ্নের মুখে পড়েন। কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দিতে না পেরে সংবাদ সম্মেলন
শেষ না করেই প্রেসক্লাব ত্যাগ করে চলে যান এবং যাওয়ার পূর্বে শাহনাজ পারভীন
সাংবাদিকদের প্রশ্নের তীব্রভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।