সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ দাওয়াতী পক্ষ উদ্বোধন করেন।
সেক্রেটারি সুলতান মাহমুদের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, সহযোগী সংগঠন-এর নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্য রাখেন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাও. হাবিবুল্লাহ হাবিব, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুহা. ওমর ফারুক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমাদের স্বাধীনতা আক্ষরিক অর্থেই রক্তে কেনা। কথা ছিল, দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। বৈষম্য দূর হবে। দুর্নীতি, দুঃশাসন মুক্ত দেশ গঠন হবে। এদেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিঃসৃত শাসনতন্ত্র হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেখা গেল, রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে কোন ধরনের জনমত যাচাই না করেই ভিনদেশিদের অন্ধ অনুসরণ করা হলো। সরকার পদ্ধতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, অর্থনীতি নিয়ে মস্কো-ওয়াশিংটন দোলাচালে ব্যাহত হলো দেশগঠন। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের বিকাশ হুমকির মুখে পড়লো। শিল্প বিকাশ থমকে গেলো।
আইন-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়লো। রাজনীতি হয়ে পড়লো আদর্শহীন, পেশীশক্তি ও কালো টাকা নির্ভর। এমন বাস্তবতায় ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী, উলামায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখ, শিক্ষাবিদ ও গণমানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.)-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (রাজনৈতিক নিবন্ধন নং-০৩৪)। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ ভূখণ্ডের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বোধ-বিশ্বাস বিশ্লেষণ করে এবং মানুষের মনস্তত্ত্ব অনুধাবন করে ইসলাম ও দেশীয় ঐতিহ্য উদ্ভূত নীতিকে দেশ পরিচালনার যথার্থ নীতি হিসেবে গ্রহণের দাবি নিয়ে জনমত গঠনের কাজ করে আসছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৭১ কে ধারণ করি। অসহায়, মজলুম ও গণমানুষের জন্য সংগ্রাম করি এবং এদেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও ইসলাম নিঃসৃত নীতিতে নারীর উন্নয়ন ও মুক্তির আন্দোলন করি। দেশের সকল ধর্মের ও বিশ্বাসের মানুষের অধিকার এবং নিরাপত্তায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকি। আমরা সংঘাত নয়: বরং শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করি। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। খেদমতে খালকের মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনের চেষ্টা করি। আমরা শুধু ক্ষমতা অর্জনকেই মুখ্য মনে না করে নীতির পরিবর্তনে কাজ করি।
শ্রমিক নেতা মাও. হাবিবুল্লাহ হাবিব বলেন, রক্তে কেনা স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হলো: কিন্তু এখনো দেশের ৪২% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। ৪৭% উচ্চ শিক্ষিত বেকার। মাত্র ১% লোকের হাতে জাতীয় আয়ের সিংহভাগ কুক্ষিগত হয়ে আছে। গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সুচিকিৎসা যেন সোনার হরিণ। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন বৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা।
অবাধে খুন, গুম ও বিনা বিচারে হত্যাসহ আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতিতে দেশে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা আজ প্রকট। মাদক, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। শাসক শ্রেণী জনগণের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং মুক্ত ও গঠনমূলক রাজনৈতিক অধিকারের মতো মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। সবশেষে তারা শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আঘাত করে ধর্মীয় মূল্যবোধসহ জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
ছাত্রনেতা ওমর ফারুক বলেন, কেন এই পরিস্থিতি? মাত্র ৯ মাসে যে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও তাদের কেন এই দুর্গতি? এই দুর্গতির প্রধান ও একমাত্র কারণ হলো, এদেশের বোধ-বিশ্বাস, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিবর্জিত মানবরচিত ধার করা শাসন নীতি। আমাদের বিশ্বাস, দেশের এই ক্রান্তিকাল উত্তরণে ইসলামই একমাত্র সমাধান।প্রিয় বন্ধু!
মানুষ শান্তি-মুক্তি চায়; কিন্তু ক্ষমতাসীনদের দুঃশাসনে আজ দেশবাসী দিশেহারা। আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা উপেক্ষা করে মানবরচিত মতবাদের অনুসরণের কারণেই আমাদের এই পরিণতি। তাই আসুন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দেশের স্বার্থরক্ষা এবং ঈমানী দায়িত্ব পালনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পতাকাতলে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সকলে সমবেত হই। ন্যায় প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবুল করুন, আমীন।
পরিশেষে নগর সভাপতি আগামী ২৮, ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ ঐতিহাসিক চরমোনাই বার্ষিক মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানান।