নারায়ণগঞ্জ খানপুর ও ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের রোগীরা দালাল চক্রের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে একাধিক নারী-পুরুষ (দালাল) রোগী ভাগিয়ে নিতে তৎপর থাকে। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীরা একাধিক চক্র গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ করছেন রোগীরা।
হাসপাতালের সামনে ও আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০ থেকে ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যা সংকট ও চিকিৎসাসেবার অব্যবস্থাপনার সুযোগে দালালরা রোগীদের নিয়ে যায় ক্লিনিকে। কতিপয় চিকিৎসকও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পাঠাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। রোগীরা বাধ্য হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ছুটছেন। পৌর এলাকায় গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে কমিশন বাণিজ্য। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও দালালদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে জমজমাট হয়ে উঠেছে ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের প্রয়োজন ছাড়াই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বলে দেওয়া হচ্ছে, কোন প্রতিষ্ঠানে এসব পরীক্ষা করাতে হবে। অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে চিকিৎসকরা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও বকাঝকা করেন বলে অভিযোগ করা হয়। তাই রোগীরা নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের খানপুর ও ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ রোগীদের বাইরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া দালালদের কারণে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সমানে একদল তরুণ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম উজ্জ্বল। হাসপাতাল এলাকায় তাঁর বাড়ি। জরুরি বিভাগের চারদিকে সারিবদ্ধ ইজিবাইক দাঁড়ানো। ইজিবাইকের সামনে চালক দাঁড়িয়ে। এ সময় হাসপাতাল থেকে বের হন এক রোগী। হাতে তাঁর একটি ব্যবস্থাপত্র। তিনি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দালালেরা রোগী ও তাঁর স্বজনদের নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা–নীরিক্ষা করানোর জন্য টানাটানি শুরু করেন।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক দালাল জানান, জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকেরা হাসপাতালে কর্মরত ঝাড়ুদার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ইজিবাইকচালকদের নিয়ে একটি দালাল চক্র তৈরি করেছে। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে পরীক্ষা–নিরীক্ষা লিখে দেওয়ার পর দালালেরা রোগীদের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের নিয়ে যায়। একজন রোগী নিয়ে আসতে পারলে একজন দালাল ১০০ টাকা পেয়ে থাকেন। একইভাবে সমপরিমাণ টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
দালাল চক্রের হস্তক্ষেপে রোগীদের অনেক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের একজন মখলেছুর রহমান বলেন, তাঁর বাবা মাঠে কাজ করতে গিয়ে কোমরে আঘাত পান। পরে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র নিয়ে এক দালাল ভালো চিকিৎসার কথা বলে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে আট ধরনের পরীক্ষা করানোর পর ওষুধ লিখে দেওয়া হয়। চিকিৎসা করাতে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে।