সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ শহরের বরফকল এলাকায় অবস্থিত বরফকল ঘাট ও চৌরঙ্গি পার্কের সামনে এখন কিশোর গ্যাং এর দখলে।
বরফকল এলাকায় ডিবি পুলিশের সাথে ব্যবসায়ীদের মারামারি,প্রেমিকার ফোন দিতে গিয়ে যুবক খুন ও দুই সাংবাদিকের উপর কিশোর গ্যাং এর হামলার পরও কেন প্রশাসন এই জায়গার উপর যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা তা এলাকাবাসী বোধগম্য নয়।
কিশোর গ্যাং কালচার এখন সারা দেশেই পরিচিতি পেয়েছে। তবে এই পরিচিতি মোটেও ইতিবাচক নয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে ওঠা দলবদ্ধ এই অপরাধীচক্র এখন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘কিশোর গ্যাং’ এখন বড় ধরনের একটি সামাজিক সমস্যা। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব দলের অনেক সদস্যই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হয়নি।
শহরের নিকটতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে অন্যতম বরফকল খেয়াঘাট সংলগ্ন চৌরঙ্গি পার্ক ( বিআইডাব্লিউটিএ ইকোপার্ক )। ঈদ কিংবা যেকোন ছুটির দিনে এখানে দেখা যায় র্দশনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। তবে গত ২০১৮ সালের (২৬ আগস্ট) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্ক সংলগ্ন ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ীদের সাথে ডিবি পুলিশের মারামারির ঘটনায় পার্কটির র্দশনার্থী দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গত ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই ফয়সাল নামে এক কিশোর শহরের খানপুর বরফকল এলাকায় বান্ধবীর মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিতে গেলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে পাঁচ কিশোর বাহিনীর একটি কিশোর গ্যাং।
গত ১৩ই জুন বিকালে দুইজন সাংবাদিকের উপর কিশোর গ্যাং বাহিনীর ২০/২৫ জন সদস্য হামলা চালায়।
যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মাঠে খেলার কথা, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা—সেই বয়সের কিশোররা এখন ছুরি-চাকু, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। বাধা দিলে রক্তারক্তি, খুুনাখুনি করে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে দুর্নীতি, অপরাধ ও অপরাধের নানা উপাদান রয়েছে, কিশোররা তার বাইরে নয়। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে। এলাকায় খেলার মাঠ নেই। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চাও নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তারকাখ্যাতি, হিরোইজম, ক্ষমতা, বয়সের অপরিপক্বতা, অর্থলোভ। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পারিবারিক শিক্ষার অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে।