সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
২১ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের চলতি বেতন, পূর্ণ বোনাস দিতে হবে
বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি কর ও মহার্ঘ ভাতা দাও
২১ এপ্রিলের মধ্যে চলতি মাসের বেতন ও পূর্ণ বোনাস পরিশোধ, বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, শতভাগ মহার্ঘ ভাতা প্রদান ও ২৪ এপ্রিল গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণার দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার উদ্যোগে আজ বিকাল ৪ টায় কাঁচপুর চৌরাস্তায় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সহ-সভাপতি আনোয়ার খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ সোনারগাঁ উপজেলার সমন্বয়ক বেলায়েত হোসেন, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, রূপগঞ্জ উপজেলার সভাপতি মোঃ সোহেল, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে এবারের ঈদ নিয়ে শ্রমিকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ঈদ আসলেই কেবল ভাবতে পারে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ভাল খাবার ও কিছু জামা কাপড় কেনার। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারিত হয়েছে চার বছর আগে। এসময়ে নিত্য পণ্যের দাম ৭০% থেকে ১০০% বেড়েছে। তাদের খাবার তালিকা ইতিমধ্যে সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হয়েছে। বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি সময়ের দাবি। যতদিন নূতন মজুরি না হয় তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনেই মহার্ঘ ভাতা দেয়া দরকার।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ঈদ আসলে বেতন বোনাস নিয়ে কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি হয়। অধিকাংশ মালিকরা বোনাস না দিয়ে ৫০০/১০০০ টাকা বকশিশ দেয়। অনেকে তাও দেয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিকের সমান বোনাস দেয়া হয়। অথচ যাদের উৎপাদনের কারণে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আসে তাদের ঠিকমতো বোনাস দেয়া হয় না। শ্রমিকদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ বোনাস দিতে হবে।
এপ্রিল শেষ হয়ে মে মাসের শুরুতে ঈদ হবে। ঈদের আগে শ্রমিকের এপ্রিলের বেতন পাওয়া ন্যায্য। কিন্তু শ্রম প্রতিমন্ত্রী ১৫ দিনের বেতন দেয়ার কথা বলেছে। শ্রমিকরা মালিকের স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছে। শ্রমিকদের বেতন বোনাস ঈদের শেষ মুহুর্তে দিলে শ্রমিক বাড়ি যাওয়ার তাড়ায় ভালো করে কেনাকাটা করতে পারে না। বিশ রোজার আগে অর্থাৎ ২১ তারিখে মধ্যে শ্রমিকের পূর্ণ বোনাস ও চলতি পূর্ন বেতন পরিশোধ করতে হবে। বেতন বোনাস নিয়ে মালিকদের গড়িমসির কারণে শিল্প এলাকায় যদি শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয় তারজন্য মালিক ও প্রশাসন দায়ী থাকবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৪ এপ্রিল রানাপ্লাজা ধসের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে। রানাপ্লাজা ধসে ১১৩২ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এঘটনার পরে আর কোন শ্রমিক মালিকের অতি মুনাফার লোভে নির্মম মৃত্যুর শিকার হবে না। কিন্তু এ মর্মান্তিক ঘটনায় মালিক ও সরকারের কোন শিক্ষা হয়নি। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এখনও কারখানায় অগ্নিকাÐে, বয়লার বিষ্ফোরণে শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে।
মৃত্যু হলে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ মাত্র ২ লাখ এবং মালিক ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের শাস্তির কোন যথাযথ আইন নেই। শ্রম আইন সংশোধন করে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ এবং মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান এবং ২৪ এপ্রিলকে গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করতে হবে।