সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
রূপগঞ্জে লিলি কেমিক্যাল কারখানায় অগ্নিকাÐের জন্য দায়ী মালিকসহ সরকারি দ্বায়িত্বপ্রাপ্তদের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী নিহতদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
রূপগঞ্জে লিলি কেমিক্যাল কারখানায় অগ্নিকাÐের জন্য দায়ী মালিকসহ দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী নিহতদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে সমাজতাান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আজ সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সহ-সভাপতি হাসনাত কবীর, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট রূপগঞ্জ উপজেলার সংগঠক মোঃ সোহেল, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সংগঠক আনোয়ার হোসেন খান, ফতুল্লা থানার সংগঠক জামাল হোসেন, রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সমন্বয়ক মিজানুর রহমান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিভিন্ন কারখানাগুলোতে মালিকের অতি মুনাফার লোভে আইন না মানা এবং সরকারি দ্বায়িত্বশীলদের তদারকি না করার কারণে অগ্নিকাÐে শ্রমিকের মৃত্যু বাড়ছে। সেজান জুসের অগ্নিকাÐে ৫৪ জন শ্রমিকের নির্মম মৃত্যুর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে রূপগঞ্জে লিলি কেমিক্যাল কারখানায় ২৯ মার্চ অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে। আগুনের ঘটনায় দগ্ধ নয় শ্রমিকের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
তারা সকলেই রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। অন্যরাও মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া ‘লিলি কেমিক্যাল কোং’ নামে কারখানাটিতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। উচ্চ দাহ্যজাতীয় পদার্থ মজুত থাকলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে ছিল না ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার। কারখানার যাতায়াতপথ বন্ধ করে কেমিক্যাল মজুত করা হয়েছিল।
বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সার্কিট ব্রেকার ছিল না। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) করা সমীক্ষায় কারখানাটিকে প্রায় ৫০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের যৌথ পরিদর্শনে কাজের পরিবেশ নিরাপদ করতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে একাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সেগুলো না মেনে নানা অনিয়ম নিয়েই কারখানাটি চলছিল।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এখানে পরামর্শ দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ মনে করেছে। অতীতে যতগুলো এধরণের ঘটনায় শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে তাতে দায়ী মালিক কর্তৃপক্ষের ও প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের শাস্তি না হওয়ায় শ্রমিকের মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশে শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণ আইনটি খুব দুর্বল। যে শ্রমিকের বছরের পর বছর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে মালিকের মুনাফা এনে দেয় কারখানায় তাদের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ মাত্র দুই লাখ টাকা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে কারখানার মালিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিহত আকালুর ভাই আজিজার রহমান বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে লিলি কেমিক্যাল কারখানার মালিকসহ মামলার আসামীদের গ্রেফতার, সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আইনের আওতায় আনা এবং আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী অগ্নিকাÐে নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি করেন।