সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা হতে সংঘবদ্ধ আন্তঃ জেলা গাড়ি চোরচক্রের মূলহোতাসহ ০৫ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪, চোরাইকৃত ০৪ টি পিকআপ উদ্ধার।
সম্প্রতি র্যাব-৪ এর কাছে গাড়ি চুরির বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তকালে কয়েকজনের সংঘবদ্ধ একটি গাড়ি চোরচক্রের সন্ধান পায়। এই চক্রকে গ্রেফতারের জন্য র্যাব-৪ কাজ করে যাচ্ছিলো।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ঢাকা মহানগরীতে বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, ধোলাইখাল এলাকায় এবং ঢাকার আশেপাশে গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় একটি গাড়ি চোর চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ গাড়ি চুরি করে, গাড়ির কালার, বডি ও নাম্বার প্লেট পরিবর্তন করে কম মুল্যে চোরাইপথে বিক্রি করে আসছে। র্যাব-৪ উক্ত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারে ছায়া তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে ছায়াতদন্ত, স্থানীয় সোর্সের সহায়তায় দীর্ঘদিন অনুসরণ করে অবশেষে গতরাতে জানা যায় রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন বেরিবাধ এলাকায় সংঘবদ্ধ গাড়ি চোরচক্রের সদস্যরা গাড়ি চুরি ও চোরাইকৃত গাড়ি অবৈধ বিক্রির উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার (১১ আগষ্ট) রাত সাড়ে ৩টা হতে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন বেরিবাধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোরাইকৃত ০৪ টি পিকআপ, ০৭ টি টায়ার রিং, ০২ টি টায়ার,০১ টি টুল্স বক্স, ০১ টি চাবির ছড়া ও ০৭ টি মোবাইলসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃ জেলা গাড়ি চোরচক্রের ০৫ জন সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ সোহেল (২৬), জেলা- নারায়নগঞ্জ, মোঃ সাগর (২৩), জেলা- নারায়নগঞ্জ, মোঃ সাকিব হোসেন (২৫), জেলা- কুমিল্লা, মোঃ হাসান (২৬), জেলা- নারায়নগঞ্জ ও মোঃ কামরুজ্জামান (৩৯), জেলা- নারায়নগঞ্জ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা পরষ্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে পিকআপসহ বিভিন্ন প্রকার গাড়ি চুরির ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা সংঘবদ্ধ আন্তজেলা চোরাকারবারী চক্রের সাথেও জড়িত। ধৃত দুধর্ষ চক্রটি পরস্পর যোগসাজোশে গত ৩ বছর ধরে রাজধানী ঢাকার ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিনি পিকআপ গাড়ি চুরি করে।
গ্রেফতারকৃত সোহেল ও সাগর ঢাকার একটি হাইস্কুল ও নারায়নগঞ্জের একটি কলেজে পড়াশোনা করতো। তারা সম্পর্কে আপন ভাই। সোহেল পেশায় একজন ড্রাইভার। তারা উভয়েই মাদকাসক্ত। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ও মাদকের টাকা জোগাড় করতেই গাড়ি চুরি শুরু করে তারা। বিশেষ করে সোহেলের গাড়ি চালানোর দক্ষতা থাকায় পিকআপ গাড়িগুলোর লক ভাঙা ও যেকোনো চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করার বিষয়টি তার নখদর্পনে। এছাড়া গাড়িতে থাকা ট্র্যাকিং ডিভাইস দ্রুত সনাক্ত করে অকেজো করে দিতে সিদ্ধহস্ত সাগর। তাদের বাবা ভাড়ায় চালিত গাড়ির ড্রাইভার। তারা ২০২০ সালে গাড়ি চুরি মামলায় কুমিল্লায় জেলে ছিলো। সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সাথে মাদক মামলার গ্রেফতারকৃত এক আসামী সাকিবের সাথে পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সাকিবকেও তারা গাড়ি চুরি করতে উৎসাহী করে তুলে। গাড়ি চুরির মামলায় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তাদের সাথে মাদকাসক্ত যুবক হাসান ও কামরুজ্জামান এর পরিচয় হলে তাদেরকে গাড়ি চুরির কৌশল সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ দেয়। পরবর্তীতে মূলত সোহেলের নেতৃত্বে তারা পাঁচজন মিলে গাড়ি চুরি করা শুরু করে। চক্রটির মূলহোতা সোহেল একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করতো যেমনঃ সম্রাট, বাদশা, বুলেট, বস ইত্যাদি।
চুরির/ছিনাতাইয়ের কৌশলঃ এই চোরচক্রটি নিম্নোক্ত কৌশল অবলম্বন করে পিকআপ চুরি/ছিনতাই করতঃ
পার্কিং হতেঃ পিকআপ গুলো পার্কিং এ থাকা অবস্থায় চুরি হওয়ার ঘটনাই বেশী। ড্রাইভার বা মালিকের অনুপস্থিতিতে সুবিধামত সময়ে বিশেষ কৌশল পার্কিং এ থাকা গাড়িগুলোর লক ভেঙ্গে ও বিশেষ ধরণের মাস্টার চাবি দিয়ে স্টার্ট দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেত।
ড্রাইভারের সাথে সখ্যতা গড়েঃ কোন কোন ক্ষেত্রে চালকদের সঙ্গে মিশে কৌশলে তাদের পিকআপ ভ্যান চুরি করতে নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করে আসছিল এ চক্রটি। এজন্য তারা চালকদের লোভনীয় বিভিন্ন অফারও দিয়ে আসছিল। মালিকের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকার একটি অংশ ড্রাইভার’কে দিত।
চেতনানাশক প্রয়োগঃ খালি চলন্ত পিকআপ ভাড়া করার কথা বলে থামিয়ে বিভিন্ন কৌশলে চালককে চেতনানাশক প্রয়োগ করে অজ্ঞান করে নির্জন রাস্তায় ফেলে রেখে পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যেত।
চোরচক্রের সাংঘঠনিক কাঠামোঃ উপরোক্ত চক্রটি ৫-৭ জনের সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বলে যানা যায়।
গাড়ির তথ্য সংগ্রাহকঃ এরা টার্গেটকৃত পিকআপের তথ্য সংগ্রহ করে মূলহোতা/বস’কে জানায়।
স্পট থেকে গাড়ি চুরিঃ এ চক্রের সদস্য সাধারণত দক্ষ গাড়ি চালক হয়ে থাকে। ড্রাইভারের অনুপস্থিতিতে স্পট হতে দ্রুততম সময়ে পিকআপের লক ভেঙ্গে গাড়ি নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পালিয়ে যায়।
চোরাইকৃত গাড়ি গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখাঃ দলের এই সদস্য চোরাইকৃত গাড়ি তারা তাদের পূর্ব নির্ধারিত গোপন যায়গায় রেখে দেয়।
চোরাইকৃত গাড়ির ডিসপোজাল প্রক্রিয়াঃ দলের এই সদস্যরা নিম্নের তিন প্রক্রিয়ায় চোরাইকৃত গাড়ির ডিসপোজাল করেঃ
১ম প্রক্রিয়াঃ দলের নির্দিষ্ট সদস্য গাড়িতে থাকা কাগজ থেকে মালিকের মোবাইল নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করে দড় কষাকষি করে টাকা আদায় করত। টাকা আদায় হলে এই চক্রের গাড়ি চালক বসের নির্দেশে গাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে মালিক’কে খবর দিত।
২য় প্রক্রিয়াঃ কোন কোন ক্ষেত্রে চোরাইকৃত গাড়ির রং পরিবর্তন করে ভূয়া নাম্বার প্লেট লাগিসস