নারায়ণগঞ্জে নজরদারির অভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি। শহরের প্রায় প্রতিটি গলিতেই একাধিক ফার্মেসি যাদের নেই কোনো ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট। শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ফার্মেসি ব্যবসা। এসব ফার্মেসিতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অবাধে বিক্রি হচ্ছে এন্টিবায়োটিকসহ সকল ধরনের ওষুধ। আর এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী।
নারায়ণগঞ্জে প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি। আর এসব ফার্মেসির মূল গ্রাহক নিম্ন আয়ের মানুষজন। কোনো রকম ফার্মাসিস্ট ও ডাক্তার না থাকলেও ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই চলে সর্বরোগের ওষুধ বিক্রি। ফার্মেসির মালিক নিজেই ডাক্তার হয়ে যান। ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও করেন তারা। ফলে একদিকে যেমন ওষুধ ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অন্যদিকে সাধারণ রোগীরা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি ঘটছে নানা ধরনের ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রোগীদের মানসম্পন্ন ঔষুধ পাওয়ার এবং ঔষুধের যৌক্তিক ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে ফার্মেসি এবং ঔষুধের দোকান স্থাপন ও পরিচালনার জন্য নির্দেশিকা রয়েছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মডেল ফার্মেসিতে (লেভেল-১) কমপক্ষে একজন স্নাতক ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্ট থাকবেন, তাকে সাহায্য করবেন বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ফার্মাসিস্ট। মডেল মেডিসিন শপে (লেভেল-২) থাকবেন কমপক্ষে ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট। বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ফার্মাসিস্ট তাকে সহায়তা করবেন। প্রশিক্ষণ নেই এমন কেউ ফার্মেসি বা ঔষুধের দোকানে ঔষুধ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না, এমন কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে। ঔষধ প্রশাসনের কড়া নির্দেশনা থাকলেও সরজমিনে নারায়ণগঞ্জের একাধিক ফার্মেসিতে ঘুরে ভিন্ন এক চিত্র দেখা যায়, ডিগ্রিধারী, ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে শত শত ফার্মেসি। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এসব ফার্মেসি থেকে বিক্রি হচ্ছে ঔষুধ। অধিকাংশ ফার্মেসিগুলোতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ছারপত্র ও নেই।
প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকে। আর এসব নিয়ন্ত্রণে নেই কে-নো নজরদারি। মাঝে-মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে এক দুই হাজার টাকার জরিমানা করেই খালাস ওষুধ প্রশাসন। বৈধ ব্যবসায়ীরা বলছেন প্রশাসন নজরদারি বাড়ালে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রেহাই পাবে জনসাধারণ।
অভিযোগ রয়েছে, একাধিক নামধারী প্রতিষ্ঠান তাদের নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত করার জন্য ফার্মেসি মালিকদের উচ্চহারে কমিশন দিয়ে থাকে। এসব ওষুধ সেবন করার কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
অশিক্ষা কুশিক্ষার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিষিদ্ধ ওষুধ দেদারছে বিক্রি করছেন। ফলে এসব ওষুধ সেবন করে রোগ মুক্তির বদলে রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ঘুমের ওষুধ কিংবা নেশাজাতীয় ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। ফলে এলাকার তরুণ যুবকরা অনায়াসেই নেশাজাতীয় ওষুধ সেবন করছে নির্বিঘ্নে।
অধিকাংশ ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায়, মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ, ড্রাগ ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ নামে-বেনামে অনুমোদনহীন বিক্রয়নিষিদ্ধ কোম্পানির ওষুধও ফার্মেসিতে বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভেটেরিনারি ও মানুষের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।