নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ-হাজিগঞ্জ খেয়া ঘাটে রাত হতেই যাত্রীদের পকেট কাটা শুরু হয়। টোল আদায়ের নামে রীতিমত যাত্রীদের পকেট কাটা হয়। রাত হতেই ২ টাকার টোল ৫ টাকা করে আদায় করা হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলেও কোন সদোত্তর পাওয়া যায়না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১১ জানুয়ারী রাত প্রায় ১১ টার সময়ে ঘাট পারাপারের সময়ে হাজিগঞ্জ খেয়া ঘাটে তিন জনের ভাড়া ২ টাকা করে ৬ টাকা দেয়া হয়ে অতিরিক্ত আরো ৯ টাকা দাবি করে। রাত সাড়ে ১০ টার পরে জনপ্রতি ৫ টাকা করে আদায় করা হয় জানালেন। তবে কি কারণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে এর কারণ জানায়নি। পরের দিন বিকেলে ঘাট পারাপার হওয়ার সময় ২ টাকা ভাড়া দেয়া হলে রাতের ঘটনার কথা জানতে চাওয়া হয়। রাতের বেলা ৫ টাকা করে আদায় করা হয় এই কথা স্বীকার করলেও কেন আদায় করা হয় তা জানায়নি।
স্থানীয় সূত্র বলছে, রাত হতেই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মহোৎসবে মেতে উঠে ঘাটের কর্মকর্তারা। রাতের বেলা ২ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা করে আদায় করে। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদের রোশানলে পড়তে হয়। লাঞ্ছিত হতে হয়। তাছাড়া যারা নদী পারাপার হয়ে বন্দরে যাতায়াত করে তারা ঘাট কর্মকর্তাদের কাছে এক প্রকারের জিম্মি বলা চলে। একারণে সবাই মুখ বুজে এ অন্যায় সহ্য করে যাচ্ছে।
ইসমাইল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আরো অনেকদিন আগে থেকে ঘাটের লোকেরা যাত্রীদের পকেট কাটছে। রাত ১০ টার পরে ২ টাকার ভাড়া এক লাফে ৫ টাকা হয়ে যায়। মনে হচ্ছে এটা যেন মগের মুল্লুক।
সুমন বলেন, ‘রাতের বেলায় জোর জুলুম শুরু হয় এই ঘাটে। দিনে এক রেট রাতে আরেক রেট। রাত হতেই ২ টাকার ভাড়া ৫ টাকা করে আদায় করা হয়। এটা কোন কোন ধরণের নিয়ম। এই জোর জুলুম মেনে নেয়া যায়না। ওরা গায়ের জোরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো তেড়ে আসে ওরা।
পদে পদে অনিয়ম, সমন্বয়হীনতা ও গাফিলতিতে চলছে হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরি সার্ভিস। ইজারা গ্রহণের সময় ধার্যকৃত টোলের চেয়ে বাড়তি টোল আদায় হচ্ছে ফেরিতে। নদী পারাপারে নিরুপায় বিধায় বাড়তি টোল দিয়ে যাতায়াত করছেন পরিবহন চালকেরা। তবে ফেরির বাড়তি টোল আদায়ের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটে দুটো ফেরি চলাচলের অনুমোদন দেওয়া দিয়েছে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। একটি ফেরির চলাচলের সময় সকাল ৮ থেকে রাত ১১ টা। কিন্তু অন্য ফেরি চলে দিনের অর্ধ বেলা। দুপুর ১২ টা হতে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। যদিও সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী দুটো ফেরি সারাদিন সচল রাখার নিয়ম রয়েছে। একটি ফেরি অর্ধবেলা চালু রাখার কারণ হিসেবে ফেরির কর্মচারীরা জানান, ফেরি দুটো চালালে ফেরিতে যানবাহনে পূর্ণ হওয়ার আগেই চালু করা লাগে। কিন্তু ফেরি একটি চললে যানবাহনে পূর্ণ হলে ফেরির লাভ হয়।
এদিকে মুনাফা হ্রাসের অজুহাতে ফেরি কম চালালেও অনুসন্ধানে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের অনুমোদন বিহীন ফেরিতে যানবাহনের টোল বাড়ানো হয়েছে। ফেরির টোল সাইকেলের ৫ টাকা, রিক্সা/ ঠেলাগাড়ির ১০ টাকা, মোটরসাইকেলের ১৫ টাকা, সিএনজি বা অটোরিকশার ২৫ টাকা, প্রাইভেট কারের ৬০ টাকা, পিকআপ বা জিপের ৮০ টাকা, টেম্পুর ৩০ টাকা, ঢালাই গাড়ির ১০০ টাকা, ঘোড়ার গাড়ির ১০০ টাকা, মিনিবাসের ৯০ টাকা, বড় বাসের ২৫০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাকের ১৫০ টাকা, হেভি ট্রাকের ৩০০ টাকা, কন্টেইনার বা ট্রেলারের ৩৭৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যা পূর্বের তুলনায় অধিক।
নিজেদের ইচ্ছে মতো যানবাহন প্রতি টোল নির্ধারণ করে চলছে ফেরি। কর্তৃপক্ষের ফেরিতে লাভ হচ্ছে না অযুহাত দেখালেও সারাদিনে প্রতিবার চলাচলে ফেরির আয় হয় গড়ে পনেরোশ থেকে ষোলশ টাকা। একটি ফেরি প্রতি ঘন্টায় ৩ বার চলাচলের নিয়ম রয়েছে। অন্যদিকে ফেরির কর্মচারীর সূত্র অনুযায়ী ফেরি চালাতে প্রতিবারে ২ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হয়। ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১০৯ টাকা। এছাড়াও ফেরির যাত্রী ছাওনিতে বসানো হয়েছে একটি চায়ের দোকান। যেখানে বাৎসরিক ৫০ হাজার টাকা ও দৈনিক ১৫০ টাকা ভাড়া আদায় হয়।
ফেরির টোল বৃদ্ধির পর থেকে যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হলেও মনে সৃষ্টি হয়েছে হতাশার। অটোরিকশা চালক নিজের হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সকালে ফেরি চলে একটা। ফেরি ঘাটে আইসা না পাইলে আধঘন্টা ঘাটে বইসা থাকন লাগে। ফেরি আসলে, ফেরি গাড়ি দিয়া ভরলে তারপর ছাড়ে। এনেও সময় যায়। ফেরির ভাড়া আগে ছিল ১৫ টাকা এখন করছে ২৫ টাকা। টোল বাড়লেও রিকশার যাত্রীদের কাছে তো ভাড়া বাড়াইতে পারি না।
চালকদের অভিযোগ, হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরি ঘাটে গত ১৬ আগস্ট থেকে এ রুটে পার হওয়া বিভিন্ন যানবাহনের কাজ থেকে পুরোনো রসিদে নতুন সিলে মেরে ইচ্ছে খুশি মত টোল আদায় করছে ইজারাদারের লোকেরা। খালি রিক্সা ও ভ্যানের টোল ২০ টাকা ও মালামাল থাকলে টোল বেশি আদায় করা হয়। তারা আরও জানায়, এ ঘাটের ইজারাদার অনেক ক্ষমতাবান তাই টোল আদায়কারীরা তাদের সাথে খারাপ আচরন করে থাকে হরহামেসা।
অতিরিক্ত টোল দেয়া রানা হামিদ নামে এক ব্যাক্তি জানান, তিনি নিয়মিত এই ফেরি দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন এবং ১০ টোল দিয়ে নদী পাড়াপাড় হন। কিন্ত গত ১৬ আগস্ট থেকে হঠাৎ করে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। একই সাথে তারা অন্যান্য যানবাহনের টোলও আদায় করছে নিজেদের ইচ্ছে খুশি মত।