ট্রাফিকের পুলিশের রমরমা অটো বাণিজ্য প্রতিদিন সকাল হতেই দেখা যায় অসংখ্য মানুষের ভীড়। টিনশেড একটি ঘরকে কেন্দ্র করে ভেতরে ও বাইরে অসংখ্য মানুষের আনাগোনা। একদল ঢুকছে তো আরেকদল বের হচ্ছে। সঙ্গে নিয়ে বের হচ্ছে পাকড়াওকৃত অটোরিকশা। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় ডাকবাংলো মোড় চাষাঢ়া পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে ট্রাফিক পুলিশের নিত্যদিনের চিত্র।
পুলিশ ফাঁড়ির ভবন না থাকলেও টিনশেড ঘরটি যেন ট্রাফিক পুলিশের আয়ের যেন অন্যতম উৎস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এডঃ মাহাবুর রহমান মাসুম গত ২৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে বলেন কালো চশমা পরা এসপি সাব আপনি বলেছিলেন মৌমিতা নারায়ণগঞ্জ শহরে থাকবেনা,অটোরিকশা মুক্ত থাকবে নারায়ণগঞ্জ শহর আপনার বড় বড় বুলি কোথায়। পরে তিনি পনেরো দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে দেন। এরপর ও ট্রাফিক পুলিশ যেন চোখে টিনের চশমা পড়ে তাদের বাণিজ্য চালিয়েই যাচ্ছেন।
তথ্য সূত্রে জানা যায় নারায়ণগঞ্জ শহরে অটো রিক্সার নতুন বাণিজ্য। সকাল বেলা ৬ দালালকে সাথে নিয়ে বের হন ট্রাফিক পুলিশ বাশার,শহিদুল,হাসান,শফিকুল তারপর একটা করে অটো (পড়তে হবে শিকার) ধরে একজন দালাল দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় চাষাড়া ফাড়িতে। সারাদিন দেন দরবারের পর ছাড়া হয় অটো। রেট ফিক্সড। মটর রিক্সা-১০০০/-, ছোট অটো-১৫০০/-, বড় অটো-২০০০/-। দৈনিক ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বানিজ্য!! (অটো কোনদিন বন্ধ হবে না এদের জন্যই। হকার আর যানজটে পচে গলে মরবো আমরা শহরের বাসিন্দারা।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে চাষাঢ়া পুলিশ ফাড়ির অভ্যন্তরে অসংখ্য অটোরিকশা আটক অবস্থায় রয়েছে। সেই টিনশেড ঘরকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মানুষের ভীড়। টিনশেড ঘরের ভিতর থেকে একদল বের হলে আরেক দল ঢুকছে। বাহিরে অপেক্ষমান লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তারা সবাই অটোরিকশার চালক কিংবা মালিকপক্ষের লোকজন। প্রভাবশালী কোন লোকের অটোরিকশা হলে সেটা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। নয়তো হাজার টাকার উপরে জরিমানা গুনতে হয়। তবে অটোরিকশার এই জরিমানা আদায়ের কোন রশিদ দেয়া হয়না। টাকা হাতে পেলে পুলিশ অটোরিকশা ছেড়ে দেয়।
এদিকে পুলিশের এই মাসোহারা বাণিজ্যের কারণে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যেন ভেঙ্গে পড়েছে। শহরের এক নং রেল গেইট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত আসতে প্রায়শই আধা ঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিট সময় লাগছে। অভিযোগ রয়েছে যেসব অটোরিকশা নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দেয় তাদেরকে শহরে অবাধ চলাচলে কোন ধরনের বাধা দেয়া হয়না।
নাম বলতে অনিচ্ছুক এক অটো চালক বলেন আমি আগে গার্মেন্টসে কাজ করতাম চাকরি চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অটো চালাই পুলিশ কয় অটো নাকি অবৈধ তাহলে সরকার কিল্লিগা বাংলাদেশে অটো আনে আমরা গরিবরা কিনলেই অবৈধ হইয়া যায়, আবার যারা সাংবাদিকগো (কথিত) টাকা দেয় তাগোডি ধরেনা।এবার কন স্যার আমরা গরিব কি করমু।
শহরের চাষাঢ়ায় সিটি করপোরেশনের মার্কেটে অবস্থিত সুগন্ধা বেকারীর সামনে থেকে বাগে জান্নাত মসজিদ পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় গামী অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড, অবৈধ বেবীট্যাক্তি ও টেম্পু স্ট্যান্ড, দুরন্ত ও শীতলক্ষা পরিবহনের স্ট্যান্ড ছিল। তবে বর্তমানে সেখানে চলছে অবৈধ ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। শহরের মিশনপাড়া মোড় হয়ে উল্টো পথে প্রতিনিয়ত অবৈধ ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাগুলো চাষাঢ়া মোড়ে আসছে। উল্টোপথে এসে মাঝখানে বাগে জান্নাত জামে মসজিদের সামনে এসে ঘুরিয়ে ব্যাক গিয়ারে আবারো চাষাঢ়া মোড়ের দিকে যেতে থাকে অবৈধ ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাগুলো। এভাবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উল্টো পথে চলাচল করছে অবৈধ ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাগুলো।
একই অবস্থা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কেও। ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাগুলো এখন শহরের যত্রতত্র প্রবেশ করছে। সিরাজদ্দৌলা সড়কেও রয়েছে অটোরিকশা মিশুকের অবৈধ স্ট্যান্ড। এতে করে বঙ্গবন্ধু সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, সলিমুল্লাহ সড়ক, সিরাজদৌল্লা সড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা তেমন দেখা যায়না। এসব সড়কে যাতায়াতে মানুষের তীব্র ভোগান্তিতে পরতে হয়। আধা ঘণ্ট থেকে পৌনে এক ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। সাম্প্রতিক সময়ে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য চরম আকারে ধারন করেছে। নগরীতে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য রুখতে যেন ব্যর্থ ট্রাফিক পুলিশ। এজন্য পুলিশের উৎকোচ বাণিজ্যকে দায়ী করেছে সচেতন নাগরিকরা।
এ বিষয়ে জানতে জেলা ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) আব্দুল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।