ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথের রাস্তায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিদ্যালয় থেকে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সদর ইউএনও’র কার্যালয়ে গিয়ে সমস্যা নিরসনের দাবি জানিয়ে স্মারক লিপি প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌস, ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ফরিদ আহমেদ লিটন প্রমুখ।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ও দাবী মনোযোগ সহকারে শুনেন। পরে তিনি বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ডাইং কারখানা থেকে নির্গত পানির কারণে যে এই জ্বলাবদ্ধতার সৃষ্টি এটা আমি জানতাম না।
যেহেতু আজ আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম সেহেতু আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, ডাইং কারখানার নির্গত পানির কারণে যাতে আর জ্বলাবদ্ধতা না হয় তারজন্য প্রয়োজনে ডাইং কারখানার মালিকদের বাধ্য করা হবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাত ফেরদৌস জানান- উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তাসহ তাৎক্ষণিকভাবেল স্পটে যাই। স্পটে গিয়ে নিম্নরূপ সমস্য সমূহ চিহ্নিত করা হয়।
ড্রেনে আবাসিক বর্জ্য, পলিথিন, কাপড়, কেমিক্যাল দ্বারা ড্রেনের মখি বন্ধ। ড্রেন থেকে সংকীর্ণ খাল পর্যন্ত বর্জ্য দ্বারা পরিপূর্ণ। যার ফলে পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে।
খালের সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। ডাইং কারখানাগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। পরিবেশ দূষণরোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম বা সংশ্লিষ্টতা পরিলক্ষিত হয়নি।
বুধবার (২ নভেম্বর) তারিখে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার দ্বারা খালের সীমানা নির্ধারণ করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক আগামীকাল থেকে খাল পরিস্কার করা হবে। খালের গভীরতা পূর্বের অবস্থায় আনা হবে। খালের সীমানা নির্ধারণপূর্বক খালের যথাসম্ভব পূর্ব অবস্থায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাস্তায় জমাকৃত পানি অপসারন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডাইং কারখানার কেমিক্যালযুক্ত পানি অপসারণের জন্য ডাইং কারখানাগুলোকে দায়বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বিক্ষোভে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ফরিদ আহাম্মেদ লিটন অভিযোগ করে বলেন, ডাইং কারখানা গুলো থেকে নির্গত দুষিত পানিতে সারা বছরই দাপা ইদ্রাকপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে বেপারী পাড়া হয়ে ফজর আলী মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত সড়কটি সারাবছরই তলিয়ে থাকে।
ফলে এই সড়কে পাশে অবস্থিত ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সেহাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি জামে মসজিদ, একটি কবরস্থান, একটি মাদ্রাসা ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ রয়েছে বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
এছাড়া রয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। অথচ সারা বছর সড়কটি দূষিত পানিতে ডুবে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম এখন বন্ধের পথে।
অপরদিকে কর্মজীবী মানুষদের প্রতিনিয়ত এই ময়লা দূষিত পানি মাড়িয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আরেকদিকে যাদের পরিবার শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়ার উপর নির্ভরশীল তারা ভাড়টিয়া না পেয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এছাড়া মুসল্লারা মাসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারে না এবং কেউ মারা গেলে দাফনের জন্য ময়লা পানি মাড়িয়ে কবরস্থানে যেতে হয়। এভাবে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে দূভোগ পোহাতে পোহাতে অতিষ্ট হয়ে উঠছে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
ফরিদ আহাম্মেদ লিটন আরো বলেন, এই অবর্ননীয় দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার ডাইং কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছি কিন্তু তারপরও তারা এ ব্যপারে কার্যকর কোনধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
ফরিদ আহাম্মেদ লিটনের মত একই অভিযোগ করে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য ডাইং মালিকদের অনেকবার চিঠি দিয়েছি।
কিন্তু তারা এ সমস্যা সমাধানে নূন্যতম আন্তরিকতা দেখায়নি। আবার অনেক মালিক আমার দেয়া চিঠিটা পর্যন্ত গ্রহণ করেননি।
কর্মসূচীতে আরো বক্তব্য রাখেন-সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও শ্রমিক লীগ নেতা এস এম হুমায়ুন কবির প্রমূখ।