সকাল নারায়ণগঞ্জ
দুই ভাইকে ঘরের ভেতর লোহার খাঁচায় বন্দী করে নিরযাতনকালে এক সন্তানের হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাদের বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে ফতুল্লার দক্ষিণ রসুলপুর এলাকায় হাবিবুল্লাহ ক্যাশিয়ারের বাড়িতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।দিনের পর দিন খাবার না দিয়ে মারধরের কারণে একই রাতে এক ভাইয়ের মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। এসময় আরেক ভাইয়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে থানা পুলিশকে জানায়। পরে নির্যাতনে মৃত্যু হওয়া হাবিবুল্লাহর বড় ছেলে হেমায়েত হোসেন সুমনের (৩৫) লাশসহ দ্বিতীয় ছেলে সাফায়েত হোসেন রাজুকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
তবে নির্যাতনের শিকার দুই ভাইয়ের বাবা হাবিবুল্লাহর দাবি, তার ওই দুই ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই তাদেরকে ঘরে বন্দি রেখে চিকিৎসা করানো হয়। দক্ষিণ রসুলপুর এলাকায় তার পৃথক তিনটি টিনসেড বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে তিনি বসবাস করেন। দীর্ঘদিন তিনি কাজী নজরুল কলেজে হিসাব শাখায় চাকরি করেছেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছেন। এদিকে উদ্ধার হওয়া নির্যাতিত রাজু জানায়, সে নোয়াখালী জেলার রামনগর কেএমসি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার মা মোহসেনা বেগম ইন্তেকাল করেন। এরপর তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে তাকে ফতুল্লায় নিয়ে আসে বাবা হাবিবুল্লাহ। এর কিছুদিন পর তার বাবা তাদের খালা হিনু বেগমকে বিয়ে করলেও অল্পদিনের মধ্যে খালাও মারা যান।
পরে তাদের বাবা হাবিবুল্লাহ অন্য একজন নারীকে বিয়ে করলেও তিনিও তার বাবার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে চলে যান। এরপর বাবা হাবিবুল্লাহ গত এক বছর পূর্বে হনুফা বেগম নামে আরেকজন মহিলাকে চতুর্থবারের মতো বিয়ে করেন। এরপর থেকে তাদের দুই ভাই সুমন ও রাজুর ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। দুই ভাইকে দুইটি রুমে এক বছর যাবত তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। কখনো খাবার দেয়া হয় আবার কখনো লাঠি দিয়ে বাবা ও সৎ মা তাদের মারধর করে।
রাজু অভিযোগ করে আরও জানান, কয়েকদিন আগে রাতে সুমনকে অনেক মারধর করে বাবা ও সৎ মা। এরপর সে সারারাত কান্নাকাটি করেছে। তখন আমি অনেক চিৎকার করে আশপাশের লোকজনদের ডাকাডাকি করেছি কিন্তু আমার বাবা ও সৎ মায়ের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
রাজুর দাবি, আমি ও আমার ভাই পাগল না। আমার বাবার সম্পত্তি জমিজমার কাগজপত্রে অর্ধেক মালিকানা আমার মা মোহসেনা বেগমের নামে। এই জমি একাই বাবা ও সৎ মা আত্মসাৎ করার জন্য তাদের দুই ভাইকে পাগল আখ্যা দিয়ে এক বছর যাবত ঘরে আটক রেখে নির্যাতন করতেন। তার বড় ভাই সুমন নির্যাতনেই মারা গেছেন বলে রাজু দাবি করেন।
তবে ছেলে রাজুর অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিবুল্লাহ বলেন, আমার ৫ জন ছেলে। তবে কোন কন্যা সন্তান নেই। পাঁচ ছেলের মধ্যে দুইজনই মানসিক রোগী। অপর তিনজনের মধ্যে সেফায়েত হোসেন মোহন, ফাহিম হোসেন শাহিন ও ফাহাদ হোসেন শাকিল লেখাপড়া করে। অসুস্থ দুই ছেলেকে চিকিৎসা করেছি অনেক। বড় ছেলে অসুস্থ হয়েই মারা গেছে।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হক জানান, নিহতের শরীরের পিছনের অংশে পঁচন ধরেছে তবে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহরের জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে আরেকজনকে বন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তার বাবা হাবিবুল্লাহর কাছে রাখা হয়েছে। তবে তাকে যেন আর বন্দি করা না হয় সে বিষয়ে কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আসলাম হোসেন জানান, কবি নজরুল কলেজের অবসরপ্রাপ্প কর্মচারী হাবিবুল্লাহর দুই ছেলে প্রতিবন্ধী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তাই তাদেরকে ঘরে আটকে রাখা হতো। একজনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।