অবিলম্বে বাসা-বাড়ি ও কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংকট নিরসন, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম কমানো এবং শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনের দাবিতে পথসভা ও পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বন্দর উপজেলা শাখা।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় বন্দর ঘাটে পথসমাবেশের মাধ্যমে পদযাত্রা শুরু হয়ে বন্দর শহিদ মিনারে শেষ হয়।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বন্দর উপজেলার সংগঠক মুন্নি সরদারের সভাপতিত্বে পথসভাগুলোতে বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রাতুল, বন্দর বাসদের সংগঠক মুক্তার হোসেন, ফাতেমা আক্তার মুক্তা, তানজিলা, তনিমা শারমিন প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র ভয়াবহ গ্যাস সংকট চলছে। বাসা-বাড়িতে গ্যাসের চুলায় গ্যাস থাকে না। কোথাও অল্প অল্প আসে বা গভীর রাতে আসে। ফলে মানুষের রান্নায় বেশ সমস্যা হচ্ছে। একদিকে গ্যাস না পেলেও মাসে মাসে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আরেকদিকে সিলিন্ডার গ্যাস ও লাকরি বা কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করায় রান্নার কাজে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। একই অবস্থা চলছে কলকারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। গ্যাস সংকটের কারণে কারখানার উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
সরকারের ভুলনীতি ও দূর্নীতির ফলে আজ এ সংকট তৈরী হচ্ছে। বার বার করে দাবি উত্থাপন করার পরও সরকার গত ১০/১২ বছর ধরে পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ সংস্কার, বন্ধ গ্যাসকূপ চালু করা , নতুন কূপ খননের কোন উদ্যোগ নেয়নি। জ্বালানি সংকট নিরসনে অনুসন্ধান ও উত্তোলনে পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দিলেও সরকার এলএনজিতেই ভরসা করছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিনিয়তই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অব্যাহত দাম বৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা। উপরের পর্যায়ে সকল পণ্যের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিন্ডিকেট। তারাই কারসাজি করে ব্যাপক মাত্রায় দাম বৃদ্ধি করছে। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকার ভোট ডাকাতির সরকার, ফলে জনগণের প্রতি তাদের কোন দায় নেই।
তারা লুটপাটকারী, দূর্নীতিবাজ, মুনাফাখোরদের সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সরকার গত ৫ আগস্ট গণশুনানি না করে আইন লঙ্ঘন করে জ¦ালানি তেলের দাম ৫১% পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে এ দাম বাড়িয়েছে।
অথচ দাম বৃদ্ধির সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কম ছিল। জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম আরও কয়েকগুণ বাড়িয়েছে এবং গণপরিবহনের ভাড়াও মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ৫১% পর্যন্ত দাম বাড়লেও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার কথা বলে জ¦ালানি তেলের দাম নামমাত্র ৩.৭% কমিয়েছে। যার কোন প্রভাব নিত্যপণ্যে ও পরিবহনে পড়েনি। দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ তাদের খাবার কমিয়ে দিয়েছে। অথচ মন্ত্রীরা বলছেন বেহেস্তে আছি, কেউ বলছেন জনগণ সুখে আছে, কারণ তারা কাপড়বিহীন নেই।
এভাবে সরকার ও তার মন্ত্রীরা জনগণের সাথে তামাশা করছে। সারের দাম, তেলের দাম, পানির দাম বাড়ার সাথে সাথে এখন আবার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১২ কেজি সিলিন্ডারে ১৩ টাকা বাড়িয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দুর্নীতি-লুটপাট-দলীয়করণ চলছে সর্বত্র। সরকার একদিকে উন্নয়নের ঢাক-ঢোল পিটাচ্ছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে, লুটপাট দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের উপর দূর্ভোগ চাপিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন না ঘটিয়ে কোন রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়ন হয় না।
নেতৃবৃন্দ গ্যাস সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানান। এছাড়া নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে জনগনের ভোগান্তি নিরসন করাসহ শ্রমজীবি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশন চালু করার দাবি জানান।