হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আর মাত্র ১১ দিন বাকি। এটি বাঙালি হিন্দু সমাজের অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এখন প্রতিটি পূজা মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরির কারিগররা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের পূজা মন্ডপগুলোতে সাড়ম্বরে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্ততি। প্রতিমা শিল্পীরা দিনরাত ব্যস্ত প্রতিমা নির্মাণে। রাত দিন পরিশ্রম করে শিল্পীরা তৈরি করছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, মহিষ, সিংহের মৃন্ময় মূর্তি। দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মূর্তি তৈরিতেও রয়েছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া।
জেলায় ২২০টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। এবার নারায়ণগঞ্জে সদর থানা এলাকায় ৪২টি, ফতুল্লা থানা এলাকায় ২৮টি, বন্দর থানা এলাকায় ২৮টি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় ৭টি, সোনারগাঁও উপজেলায় ৩৩টি, আড়াইহাজার উপজেলায় ৩২টি ও রূপগঞ্জ উপজেলায় ৫০টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।
মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। দেবী মূর্তি নির্মাণ শেষ, গায়ে এখন রঙ ছোঁয়ানোর অপেক্ষায় ভাস্কর, নিপূণ শিল্পী। আয়োজকরা ছুটছেন দর্জি পাড়ায়। মা দুর্গার লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ির জরির কাজ, গণেশের ধূতিতে নকশাদার পাড় বসানো, আর মহিষাসুরের জমকালো পোশাক তৈরির কাজ এখনও যে বাকি। কেউবা ছুটছেন কামার পাড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বানিয়ে নিচ্ছেন দেবীর হাতের চক্র, গদা, তীর-ধনুক ও খড়গ-ত্রিশূল। আর ঘষা-মাজায় মিস্ত্রিরা ব্যস্ত মন্ডপগুলোকে নতুন করে তুলতে।
প্রতিমা শিল্পীরা জানান, প্রতিমা গড়া শেষ হলে রঙতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হবে অবয়ব। ফুটিয়ে তোলা হবে নাক-চোখ-মুখ। এরপর শুরু হবে পোশাক-পরিচ্ছদ পরানোর কাজ। প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি অনেক পূজা মন্ডপে চলছে সাজসজ্জার বর্ণিল আয়োজন। শুরু হয়েছে চোখ ধাঁধানো পূজা মন্ডপের মঞ্চ তৈরি ও নানা পরিকল্পনার কাজ। আয়োজকরাও কর্মব্যস্ত রয়েছেন। সব কিছিু মিলে দূর্গোউৎসবের সাথে জড়িত কারো দম ফেলার সুযোগ নেই।
রবিবার (১৮ই সেপ্টেম্বর) শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকায় শ্রী শ্রী বলদেব জিউর আখড়া ও শিব মন্দির ঘুরে দেখা গেছে প্রতিমায় মাটি লাগানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূজা মন্ডপগুলোর সাজ সজ্জার কাজও চলছে পুরোদমে। প্রতি বছরই এই মন্দিরে খুবই জাঁকজমকপূর্ন ভাবে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন ছিল দুর্গা পূজা কেন করা হয়? এনিয়ে শ্রী শ্রী বলদেব জিউর আখড়া ও শিব মন্দির এর সভাপতি জয় কে রায় চৌধুরি বলেন, দুর্গা পূজার তাৎপর্য হচ্ছে “দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন”। অসুর বলতে আমরা বুঝি খারাপ লোক, দুষ্ট নিধন করে যিনি সত্য সুন্দর তাকে আমরা পূজা করি। মনের ভিতরেও কিন্তু আমাদের দুষ্টু চিন্তা আসে। আসুন আমরা সেটাকেও কাটিয়ে উঠে সত্য এবং সুন্দরের পথে এগিয়ে চলি।
বলদেব জিউর মন্দিরে এবারের দুর্গা পূজার প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মন্দিরটি ঐতিহাসিক ভাবে অত্যন্ত প্রাচীন। এখানে প্রচুর দর্শনার্থীদের মহা মিলন মেলা ঘটে প্রতি দূর্গা পূজায়। তাই আমরা সব সময় দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধার কথাগুলো মাথায় রাখি। প্রতিমা সাজসজ্জা, আলোকসজ্জাতো আছেই সেই সাথে দর্শনার্থীদের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়। গত দুই বছর করোনা মহামারির জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারিনি স্বাথ্য সচেতনতার কারনে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর বিদ্যুতের একটি ব্যাপার থাকছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমরা এবার সাশ্রয়ী হচ্ছি। সবদিক থেকে এটাকেও আমরা বিবেচনায় রাখছি। তাই বলে সম্পূর্ণভাবে আলোকসজ্জাবিহীন হবে না। কারন উৎসব তো আর বারবার আসবে না। উৎসবটা আসলে আমার কাছে মনে হয় সকল ধর্মের। ঈদ যদি আমার হয় দূর্গা পূজাও আমার। ধর্মটা যার যার জায়গায় থাকুক উৎসবটা আমাদের সকলের হোক। এখানে সেবাইকে সেবা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকছে বলদেব জিউর মন্দির।