সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা তল্লা এলাকায় পুলিশের নাকের ডগায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে মাদক। আর আসক্তি নিরাময়ে গজিয়ে উঠছে নিত্য নতুন ক্লিনিক। দুইয়ে মিলিয়ে জমজমাট ‘ব্যবসা’ চলছে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকাগুলোতে।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অন্তত ৩৫টি স্থানে নিয়মিত মাদকের কেনাবেচা চলে। আর নেশার টাকা জোগাতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এই শহরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে ১২টি।
তল্লাবাসী বলছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ধরা পড়লেও সহজেই জামিন হয়ে যাওয়ায় মাদকের কারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
শহরের খানপুর,তল্লা রেল লাইন,বোবার বাড়ি,শিকসন বাড়ি,গফুর মেম্বারের বাড়ি,সর্দারপাড়া ও হাজিগঞ্জস্থ এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হয়।
“নারায়ণগঞ্জে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কাদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চলছে তা সবাই জানলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।”
খানপুরের তল্লা রেল লাইন এলাকায় গেলে দেখা যায়, নতুন কেউ সেখানে ঢুকলেই মাদক বিক্রেতারা শিস দিচ্ছেন। নেশাদ্রব্য কিনে কেটে পড়ছেন আসক্তরা।
ফতুল্লা থানা ও নারায়নগঞ্জ সদরের মধ্যবর্তী এই স্থানটি স্থানীয়দের কাছে ‘নেশার হাট’ বলেই পরিচিত। তল্লা রেল লাইন এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) “মোঃ রিয়াজুল হক শেখ দিপু” সকাল নারায়নগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক কে জানান এটা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাজ। পুলিশ তাদের কাজে সহায়তা করছে।
শহরের ফতুল্লা থানার তল্লা এলাকার বাসিন্দা সানজিল হোসেন জানান, তল্লা রেল লাইন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। পুলিশ তাদের কিছু বলেও না।
একই কথা বললেন শহরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দা শাওন হোসেন।
তাদের অভিযোগ, পুলিশ এই ‘নেশার হাটে’ প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হলেও এ ব্যাপারে পুলিশের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। পুলিশের সহায়তা ছাড়া প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি সম্ভব নয়।ফতুল্লার সরকারী একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানানপ্রতিদিন সকালে তল্লা রেল লাইন এলাকার ড্রেনগুলিতে ফেনসিডিলের শত শত খালি অথবা ভাঙা বোতল পাওয়া যায়।
এদিকে শহরে মাদকের এই ভয়াবহতায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। মাদকাসক্ত সন্তানদের তারা পাঠাচ্ছেন বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। সেখানে ‘চিকিৎসা’ যেমনই হোক, আসন পাওয়া দুস্কর।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন নিরাময়ের নামে এসব ক্লিনিকগুলো ব্যবসার ফাঁদ পেতে বসেছে। প্রত্যেকের জন্য ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও চিকিৎসা যথাযথ না হওয়ায় অনেকেই আবারো ফিরে যাচ্ছেন নেশার পথে।
অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন নিরাময় কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্তরা।
লিংকরোডের পাশে ফতুল্লার লামাপাড়ার মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র ‘প্রয়াস’ এর ব্যবস্থাপক কবির হোসেন জানান, তাদের এখানে সব ধরনের মাদকসেবীই চিকিৎসা নিতে আসে। তবে উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের সংখ্যাই বেশি।
ব্যবসার জন্য নয়, মাদকাসক্তি নিরাময় সেবা দিতেই এ ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
কবির জানান, তাদের ক্লিনিকে নিরাময়ের জন্য তিন মাসের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সব সময়ই গড়ে ৩০/৩৫ জন থাকে। অনেকে বাসায় থেকেও চিকিৎসা নেন।
শহরের কিল্লারপুর এলাকার ‘বাঁধন’ ও জামতলা এলাকার ‘অশ্র“’ কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, মাদকাসক্তির চিকিৎসায় অভিভাবকরা সন্তানদের জন্য তিন মাসে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা করে খরচ করেন।
এসব কেন্দ্রে আসা আসক্তদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি বলে জানান ফতুল্লার ভুঁইগড় জালকুড়ি এলাকার ‘দীপ্তি’ চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন।
সোহরাব স্বীকার করেন, চিকিৎসা নেওয়ার পরও অনেকে আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তবে এর জন্য অভিভাবকদের অসচেতনতাকেই দায়ী করেন তিনি।