সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
বাজেটে শ্রমিকের রেশন, আবাসন, চিকিৎসার জন্য বিশেষ বরাদ্দ, শ্রমঘন অঞ্চলে নারী শ্রমিকদের জন্য হোস্টেল ও বয়স্ক শ্রমিকদের জন্য পেনশনসহ ৯ দফা দাাবি বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে আজ বিকাল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সহসভাপতি এম এ মিল্টন, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের জেলার সংগঠক সুলতানা আক্তার, রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ নেতা মিজানুর রহমান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে এস.ডি.জি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। এস.ডি.জি’র ১৭ টি লক্ষ্যের প্রথম লক্ষ্য কোনো দারিদ্র থাকবে না, দ্বিতীয় লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির উন্নয়ন, অষ্ঠম লক্ষ্য শোভন ও পূর্ণকালীন কাজ নিশ্চিত করা, দশম লক্ষ্য বৈষম্য বিলোপ। করোনা পরবর্তীতে দারিদ্র বেড়েছে, বেড়েছে অপুষ্টি, কর্মহারিয়ে অনিশ্চয়তায় ধুঁকছে লক্ষ লক্ষ পরিবার, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য তীব্র হয়েছে। এই সময়ে এস.ডি.জি অর্জন করতে হলে প্রায় ৭ কোটি শ্রমজীবী মানুষ কে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে ভর্তুকি মুল্যে নিত্যপণ্যের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে, সুস্থ কর্মী উৎপাদনের অন্যতম শর্ত তাই শ্রমজীবীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের বার্ধক্যকালিন নিরাপত্তার জন্য শ্রমজীবী পেনশন স্কীম চালু করতে হবে। আর সরকারী কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয় পত্রের সুদ, কৃষি ভর্তুকির টাকা অন্তর্ভূক্ত করে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ স্ফীত করে দেখালে তা এস.ডি.জি অর্জনের আন্তরিকতার অনুপস্থিতিই প্রমাণ করবে।
বাজেট একটি দেশের অর্থনৈতিক নীতি এবং ব্যবস্থাপনার দলিল। বাজেট প্রণয়নে গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের সংগে মতবিনিময় করা হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি শ্রমিক কর্মচারীরা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য বাজেট উত্থাপন করার আগে কখনই জাতীয় অর্থনীতির প্রধান অংশ (সংখ্যায় এবং অবদানে ) ও সভ্যতার কারিগর শ্রমিকশ্রেণীর কোনো মতামত নেওয়া হয়না। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।
বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে চলেছে। একদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে অস্বাভাবিক বাজার এবং সুযোগ সন্ধানি ব্যবসায়ী চক্রের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য উর্দ্ধমুখী। শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন এবং প্রকৃত মজুরি উভয়ই কমেছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে ৭১ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে, ৪১ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ নেই। অন্যদিকে ২০২২ সালের ৯ মে আমাদের মাথাপিছু আয় হয়েছে ২৮২৪ ডলার যা ২০২১ সালের ২৩ মে ছিল ২২২৭ ডলার। অর্থাৎ গত একবছরে মাথাপিছু আয় ৫৯৭ ডলার বা ৫১ হাজার টাকার বেশী বেড়েছে।
সাধারণ মানুষের আয় হ্রাস আর মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধির এই চিত্র সম্পদ বন্ঠনে তিব্র বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরছে। করোনা মহামারীর আঘাতে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি জীবন জীবিকা যখন বিপর্যস্ত হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতেও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৬৫ হাজার কোটি বেশী টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। জিডিপি বৃদ্ধি এবং বিশাল এই বাজেট প্রমাণ করেছিল করোনা কালেও শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভুমিকা পালনে অবহেলা করেনি। করোনাকালে সরকার বিভিন্ন খাতে সোয়া লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। শ্রমজীবীদের জন্য প্রত্যক্ষ প্রণোদনার পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই কম। তা সত্তে¡ও কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে প্রণোদনার অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়নি। ফলে করোনাকালে ঝুঁকি নিয়ে দেশের সম্পদ বাড়ালেও এই সম্পদ বৃদ্ধির মুল কারিগররা বঞ্চিত হয়েছে।
করোনার ক্ষতি অর্থনীতি কাটিয়ে উঠলেও শ্রমজীবীরা এর জের টেনে চলেছে এখনও। আগামী ৯ জুন সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা বেশী। পূর্বের মতই হয়ত এই বাজেটেরও সবচেয়ে বড় আয় আসবে পরোক্ষ কর থেকে। ভ্যাট-ট্যাক্সের একটা বড় অংশ বহন করবে শ্রমজীবী মানুষ। আমরা প্রত্যাশা করি প্রায় ৭ কোটি শ্রমজীবী মানুষ যারা কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে শ্রম দিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে, যাদের শ্রমে রপ্তানি আয় বাডছে এবং যারা প্রবাসে কাজ করে রেমিটেন্স পাঠায় সেই দেশী ও প্রবাসী শ্রমিকদের আকাংখার প্রতিফলন আগামী বাজেটে থাকবে। আমরা দেশের শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ – স্কপ উত্থাপিত নিম্নলিখিত ৯ দফা বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দ প্রদানের দাবি করছি এবং সামগ্রীক অর্থনীতির বিকাশের কথা বিবেচনা করে শ্রমিক এবং শ্রমখাতে বরাদ্দের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।
৯ দফা-
১. ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমুল্যের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য শ্রমিক কর্মচারীসহ নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সুলভ মূল্যে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বরাদ্দ করা।
২. কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনায় আহত হলে চিকিৎসা, ক্ষতিপুরণ ও পূনর্বাসনসহ সামাজিক বেষ্টনির জন্য বরাদ্দ রাখা।
৩. বাজেটে পাট, চিনি শিল্প পূনরুদ্ধার ও রক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখা।
৪. শ্রমিকদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা সামজিক সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা। শিল্পঘন এলাকায় শ্রমজীবী হাসপাতাল, শিশু যতœ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা। শ্রমজীবীদের সন্তানদের জন্য বিশেষ শিক্ষা স্কিম চালু করা।
৫. অর্থ পাচারকারী, ঋণ খেলাপীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে প্রাপ্ত অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা।
৬. দূর্নীতিরোধে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রেখে তা বাজেয়াপ্ত ও আদায় করে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করার উদ্যোগ নেয়া।
৭. শ্রমজীবীদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা।
৮. ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানসহ পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
৯. কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কর্মসংস্থান ভিত্তিক উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করা।
বার্তা প্রেরক
রুহুল আমিন সোহাগ