সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
বছর দেড় আগে মাহফুজের বন্ধুদের সঙ্গে নগরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে দেওভোগ এলাকার কিছু যুবকের মারামারি হয়। শুক্রবার (১১ মার্চ) মাহফুজের বন্ধুরা জানতে পারে ওই যুবকরা পিকনিক করতে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে গেছে। রাতে তারা নগরের টানবাজার ঘাট দিয়ে ফিরবে। পুরনো দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে বন্ধু মেহেদী, তমাল ও সায়েমের সঙ্গে মাহফুজও টানবাজার ঘাটে যায়। সেখানে দেওভোগ এলাকার ওই যুবকদের সঙ্গে তাদের দেখাও হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় মাহফুজ ও তার বন্ধুরা পেরে উঠেনি। উল্টো প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে প্রাণ হারায় মাহফুজ।
শুক্রবার (১১ মার্চ) রাতে নগরের টানবাজার গুদারা ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. মাহফুজ (২০) নগরীর খানপুর বউবাজার এলাকার হারুনুর রশীদের ছেলে এবং নারায়ণগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত মাহফুজের বন্ধু মেহেদী, সায়েম ও তমালকে আটক করেছে পুলিশ। তারা তিনজনই নগরের খানপুর ও এর আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা।
নিহত মাহফুজের বড় বোন পলি বেগম বলেন, শুক্রবার বিকেলে বাসায় ফেরার পর মাহফুজের দুই বন্ধু মেহেদী (২১) ও সায়েম (২০) তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে মাহফুজ ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আছে খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করালে সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাত আড়াইটার দিকে মারা যায় মাহফুজ।
মাহফুজের পিঠে ছুরির গভীর আঘাত ছিল বলে জানান তার মা মাবিয়া বেগম। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মেসে রান্না কইরা ছেলেরে বড় করছি। তিন মেয়ের পর একমাত্র ছেলে ছিল মাহফুজ। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে মাহফুজের মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
নিহতের দুই বন্ধু মেহেদী ও সায়েমের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বলেন, বছর দেড়েক পূর্বে দেওভোগের কিছু যুবকের সঙ্গে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে মারামারি হয় মেহেদী, সায়েমসহ তাদের বন্ধুদের। কোনভাবে তারা জানতে পারে দেওভোগের ওই যুবকরা শুক্রবার পিকনিক শেষে রাতে টানবাজার ঘাট দিয়ে ফিরবে। তাদের শায়েস্তা করতে টানবাজারের গুদারা ঘাটে যায় তারা। সেখানে প্রতিপক্ষের মারধর ও ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় মাহফুজ। গুরুতর আহত মাহফুজকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাতে মারা যায় সে।
নিহত মাহফুজের বন্ধু আটক মেহেদীর স্ত্রী স্মৃতি জানান, শুক্রবার দুপুরে বাসা থেকে বের হন তার স্বামী। এরপর কী হয়েছে সেটা তারা জানেন না। মেহেদী ও নিহত মাহফুজ ভালো বন্ধু ছিল বলেও জানায় স্মৃতি। একই কথা জানান সায়েমের স্বজনরাও।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান বলেছেন, ঘটনার সময় মাহফুজের সঙ্গে থাকা তিন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানা হচ্ছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।