সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ বিকাল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সংঘঠক মিমি পূজা দাসের সভাপতিত্বে ও সুলতানা আক্তারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, সমাজতাস্ত্রিক মহিলা ফোরামের সংগঠক বিলকিস পারভীন মায়া, শামীমা আক্তার টুম্পা, কামরুন্নাহার রুমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুন্নি সরদার, অর্থ সম্পাদক নাসিমা সরদার ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য, জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন এর বিরুদ্ধে নারীর সম অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের সংগ্রামে নারী দিবস এক অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুই কারখানার নারী শ্রমিকেরা ১২/১৬ ঘন্টা শ্রম, অমানবিক কাজের পরিবেশ, মজুরি বৈষম্য, অভিবাসী ও কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ভোটাধিকারের দাবিতে হাজার হাজার নারীর মিছিলে পুলিশ নৃশংস হামলা চালালে আহত ও গ্রেফতার হন অসংখ্য নারী শ্রমিক। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের দেশে দেশে, চলতে থাকে বছরের পর বছর।
১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের দাবিতে গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক মে দিবসের রক্তাক্ত শ্রমিক অভ্যুত্থান। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন বহু সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ৮ মার্চকে নারী দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করেন। রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের রূপকার মহামতি লেনিনের উদ্যোগে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। তখন থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে দুনিয়ার দেশে দেশে পালিত হয়ে আসছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, নারী দিবস ঘোষণার ১১২ বছর পরও আমাদের দেশে নারীরা রাষ্ট্রীয়ভাবেই আইনি বৈষম্যের স্বীকার। সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় নি। এমনকি সমকাজে সমমজুরী আইনে থাকলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পালিত হয়েছে মহা ধুমধামে। অথচ এই ৫০ বছরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। সারাদেশে নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। কিন্তু কোন ঘটনারই উল্লেখযোগ্য বিচার হতে দেখা যায় নি। একটা দেশ কতখানি উন্নত তা বোঝা যায় সেই দেশের নারীরা কতখানি অধিকার ও নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন তা দিয়েই।
শুধুমাত্র বিল্ডিং আর সেতু দিয়ে উন্নয়ন বোঝা যায় না। অবিলম্বে সরকারের উচিত সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত ও ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করা এবং সিডও সনদের দুটি ধারা থেকে আপত্তি তুলে নেয়া।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কর্মক্ষেত্রে আজও নারীরা সমকাজে সমবেতন পান না। ৮ ঘন্টার কর্মদিবসের দাবি এখন উপহাসে পরিণত হয়েছে। সংসার চালানোর খরচ যোগাতে শ্রমিকরা নিজেরাই ওভারটাইম কাজ করতে চায়। গৃহশ্রমিকদের তো কর্মঘন্টার কোন হিসেবই থাকে না। গৃহস্থালী কাজের মূল্যায়ন হয় না। অথচ গৃহিনী নারীরা দিনে গড়ে ১৬ ঘন্টা ও ৪৫ ধরণের কাজ করে থাকেন।
গৃহস্থালী কাজকে অর্থনৈতিক কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, জিডিপি’র অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, সকল ক্ষেত্রে ৬ মাস মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটি কার্যকর করতে হবে, সকল নগর ও পৌর এলাকায় সরকারিভাবে ডে কেয়ার সেন্টার চালু করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক যে কোন সংকটে সবচেয়ে বেশি ভূক্তভোগী হন নারীরা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট না দেয়ার জন্যও নারীকে ধর্ষিত হতে হয় আবার দ্রব্যমূল্যসহ গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাবও ঘরের নারীদের ওপরই সবচেয়ে বেশি পড়ে।
ফলে নারীর অধিকার রক্ষা, কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি যে বৈষম্যমূলক সমাজের কারণে মানুষের উপর শোষণ নির্যাতন চলছে প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধেও সচেতন সংগ্রাম গড়ে তোলা অত্যাবশ্যকীয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের চেতনার মূলেও ছিল শোষণ বৈষম্যহীন সাম্য সমাজ গড়ার আহŸান।