সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
বন্দরে আলোচিত মিতু হত্যাকান্ডের ঘটনায় আদালতে স্বামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর বেরিয়ে এসেছে আরো লোমহর্ষক তথ্য । হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্য যেভাবে পরিত্যক্ত জলাশয়ে নিক্ষেপ করা হয় তা নিয়ে মুখ খুলেছেন ৩দিনের রিমান্ডে থাকা আবুল হোসেন (৩২) নামের আরেক আসামি। এ হত্যাকান্ডের মূল আসামী অর্থাৎ তার স্বামী রবিনকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যমতে, গত (৯ আগষ্ট) বন্দর নবীগঞ্জ এলাকা তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বন্দর থানার নবীগঞ্জ এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে। তিনি সেখানকার একটি হালকা যানবাহনের গ্যারেজ মালিক। আবুল হোসেনকে ঐদিনই আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ আদালত তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে থাকার প্রথমই দিনই তিনি পুলিশের কাছে সে রাতে লাশ গুম করার অপচেষ্টার বর্ণনা দেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন,
গত ১২ জুলাই রাতে মিতুর স্বামী রবিন আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। তখন পর্যন্ত আমি এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মিতুকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। ঠিক সে মুহুর্তে রবিন ও তার ভাড়াটে গুন্ডা রাজিব, ওয়াশিম ও আরিফ আমাকে ভ্যান নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে বলে। আমি ভয় আমার গ্যারেজ থেকে একটি ভ্যান গাড়ী পাঠাই।
প্রথমেই মিতুর নিথর দেহ ড্রামে ভেতরে ঢুকানো হলে মাঝপথে ড্রামটি ফেটে যায়। পরে ফের তোষক পেঁচিয়ে নবীগঞ্জ বাগবাড়িস্থ একটি পরিত্যক্ত জলাশয়ে লাশটি ফেলে আসা হয়। ঘাতক রবিন নাসিক ২৩ নং ওর্য়াডস্থ বড়বাড়ি এলাকার ইউসুফ মিয়ার ছেলে। রিমান্ডে থাকা আবুলের রিক্সা গ্যারেজটি ইউসুফ মিয়ার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে চালায়। তার ভ্যান গাড়ী আসতে বেশি রাত হওয়াই ও ইউসুফ মিয়ার রক্তচক্ষু, গ্যারিজের দোকানের মালিকের কথায় গিয়ে দেখি এমন ঘটনা। ধৃত আবুল যে অপরাধে আসামী তার হুকুমের আসামী ইউসুফ হওয়া উচিত। এলাকাবাসীর দাবী ইউসুফের ছেলে রবিন একজন লম্পট ও খারাপ প্রকৃতির। ইউসুফ মিয়াকে থানা পুলিশ জিঙ্গাসাবাদ করলে আরো অনেক গোপন তথ্য বেড়িয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই রাতে বন্দরের আমিন আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় পরকিয়া সম্পর্কের জেরে ১লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি আরিফ, ওয়াশিম ও রাজিবের মাধ্যমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মিতুকে হত্যা করে তারই স্বামী রুহুল আমিন ওরফে রবিন।গুম করার উদ্দেশ্যে তারা সেদিন রাতেই তোষক পেঁচিয়ে নবীগঞ্জ বাগবাড়িস্থ একটি পরিত্যাগ ডোবায় লাশটি ফেলে আসে।
৩দিন পর স্থানীদের সুত্র ধরে গত ১৫জুলাই ঐ জায়গা থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এব্যাপারে বন্দর থানা হত্যা মামলা রুজু হলে ১৬ তারিখ সকালেই মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবুল খায়ের এর নেতৃত্বে নবীগঞ্জ এলাকার নিজ বাড়ি হতে মৃত হাজী ফজল করিমের ছেলে ওয়াশিম(৩৫),চৌরাপাড়া এলাকার মহারাজ মিয়ার ছেলে রাজিব(৩৫), তিনগাঁ এলাকার আওলাদ মিয়ার ছেলে আরিফ(৪০) কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ আদালত ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেও আদালতে জবানবন্দি দেয়নি। পরে তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী ভুক্তভোগী মিতুর স্বামী রবিনকে গত ৯আগষ্ট সুদূর মানিকগঞ্জ জেলার সিবালয় থানার একটি এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, মুলত স্ত্রী’র পরকিয়ার সম্পর্কের জের ধর তার স্বামী রাজিবের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মিতুকে হত্যা। এখনো পর্যন্ত ধৃত সকলই হত্যাকাণ্ড কোন না কোন ভাবে জড়িত আছে বলে তারা স্বীকার করে। এবিষয়ে আরো তদন্তের পর বাকি তথ্য প্রকাশ করা হবে। লম্পট রবিন ৮ টি বিয়ে করেছে বলে জানা গেছে। ইউসুফ মিয়ার ছেলে রবিন লম্পট, মেয়ে ২ জন। ইউসুফের মেয়ে রেখা ও শিখাসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। অনেক ছেলেদের ব্ল্যাকমেইল করার প্রমানসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ঘাতক রবিনের পিতা ইউসুফ মিয়া এলাকার মধ্যে একজন নিকৃষ্ট পরিবারের কর্তা।