সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন ডেস্কঃ
ইসলাম নারীর পোশাকের ওপর যেমন কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তেমনি পুরুষের পোশাকের ব্যাপারেও কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
এখানে ইসলামের দৃষ্টিতে একজন পুরুষের পোশাকের ধরন নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. কোরআন ও হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে এমন পোশাক ব্যতীত অন্য সব ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়েজ। যেমন পুরুষের জন্য সিল্কের কাপড় পরা নিষেধ।
কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই দুটি জিনিস (স্বর্ণ ও সিল্ক) আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ, তবে নারীদের জন্য অনুমতি রয়েছে। (ইবনে মাজা, ৩৬৪০)
একইভাবে পরিশোধন করা ছাড়া কোনো মৃত প্রাণীর চামড়া পরিধান করা নিষেধ। তবে ভেড়া, ছাগল কিংবা উটের পশম দ্বারা প্রস্তুত পোশাক পরিধান করা জায়েজ।
২. নারীর পাশাপাশি পুরুষের জন্যও এমন পাতলা পোশাক পরিধান করা নিষেধ, যা পরিধান করা সত্ত্বেও সতর দেখা যায়।
৩. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করা হারাম। সুতরাং কাফিরদের জন্য নির্দিষ্ট এমন কোনো পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন— রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরিধানে হলুদ রঙের দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না। (মুসলিম: ২০৭৭)
৪. পুরুষের জন্য নারীর অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই সব পুরুষকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের অনুকরণ করে। আবার ওই সব নারীকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের অনুকরণ করে। (বুখারি: ৫৫৪৬)
৫. বিসমিল্লাহ বলে ডান পাশ দিয়ে পোশাক পরিধান করা ও খোলার সময় বাম পাশ দিয়ে খোলা সুন্নাত।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— তোমরা পোশাক পরিধান করার সময় আর ওজু করার সময় ডান পাশ দিয়ে শুরু করবে। (আবু দাউদ: ৪১৪১)
৬. নতুন পোশাক পরিধান করার সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও দোয়া পড়া সুন্নাত।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নতুন কাপড় পরিধান করার সময় এই দোয়া পড়তেন—
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উয়ারি বিহি আওরাতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি।
অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে কাপড় পরিয়েছেন, যা দিয়ে আমি লজ্জাস্থান ঢাকি এবং জীবনে সৌন্দর্য লাভ করি। (তিরমিজি: ৩৫৬০)
৭. সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা সুন্নাত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এতে করে যেন আবার অহঙ্কার চলে না আসে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— যার অন্তরে অণুপরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এ-ও কি অহঙ্কার? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন— আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহঙ্কার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা। (মুসলিম: ৯১)
৮. সাদা পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— তোমরা সাদা পোশাক পরিধান কর। কেননা সাদা পোশাকই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম। আর তোমাদের মৃতদেরও সাদা পোশাকে দাফন কর। (তিরমিজি: ৯৯৪)
৯. পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা হারাম।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— পোশাক টাখনুর নিচে যতটুকু যাবে ততটুকু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। (বুখারি: ৫৪৫০)
টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
১০. প্রসিদ্ধি লাভের জন্য দম্ভভরে কোনো পোশাক পরিধান করা হারাম।
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে দম্ভভরে পোশাক পরিধান করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে লাঞ্ছনা ও অপমানের পোশাক পরিধান করাবেন। (ইবনে মাজা: ৩৬০৭)
কথায় আছে, পোশাকেই পরিচয়। সুতরাং পোশাক নির্বাচনের সময় এমন পোশাক নির্বাচন করতে হবে যা দ্বারা আমাদের মুসলমান পরিচয় অক্ষুন্ন থাকে।