1. [email protected] : সকাল নারায়ণগঞ্জ : সকাল নারায়ণগঞ্জ
  2. [email protected] : skriaz30 :
  3. : wpcron20dc4723 :
সাহিত্য জগতে এতিমের মতো বড় হয়েছি - সকাল নারায়ণগঞ্জ
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বশিষে উদ্দশ্যেে র্গামন্টেস শ্রমকি ফ্রন্টরে নতেৃবৃন্দরে নামেবভ্রিান্তকির সংবাদ প্রকাশরে প্রতবিাদ সংখ্যানুপাতিক হার (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন দেশের জনগণ মেনে নিবে না পুলিশ ‍সুপারের সাথে ইসলামী আন্দোলনের মতবিনিময় নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মুশিউর রহমানকে ভৎসনা করেছেন আদালত সেলিম খন্দকার খোকার মত্যুতে নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক উন্নয়ন ফোরামের গভীর শোক প্রকাশ জান্নাতুল বাকিতে ডা. রাশেদার দাফন সম্পন্ন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ-এর সাথে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃকর্মীদের সাক্ষাত ইসলামী আন্দোলন নগর সাংগঠনিক সম্পাদকের মায়ের ইন্তেকাল বাস ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

সাহিত্য জগতে এতিমের মতো বড় হয়েছি

সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
  • আপডেট বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ২১৪ Time View

সকাল নারায়ণগঞ্জ অনলাইন ডেস্কঃ

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা কাব্যে যে অল্পকিছু ভিন্নমাত্রার শক্তিশালী কবিতার সংযোজন ঘটেছে, এর বেশির ভাগই ময়ুখ চৌধুরীর কলম থেকে।

নতুন বিষয় এবং অগ্রগামী ভাষায় চিত্রকল্প নির্মাণে দক্ষ ময়ুখ চৌধুরীর কবিতা এখনও যে কোনো তরুণ কবির জন্য চ্যালেঞ্জের। লেখালেখির শুরু থেকেই নিজস্ব কাব্যস্বরের জন্য তিনি বোদ্ধা মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

ছাপালেখার ২৩ বছর পর তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালো বরফের প্রতিবেশী’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে এবং সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ জারুলতলার কাব্য প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। সম্পাদনা করেছেন ‘প্রতীতি’ ও ‘কবিতা’ শিরোনামের দুটি সাহিত্যকাগজ।

চার দশক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। জন্ম ১৯৫০ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রামে। লেখাপড়া চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রকাব্য বিষয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল ‘রবীন্দ্রনাথের পোয়েটিক ওরিয়েন্টেশন।’ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ‘অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে’, ‘তোমার জানলায় আমি জেগে আছি চন্দ্রমল্লিকা’, ‘প্যারিসের নীলরুটি’, ‘আমার আসতে একটু দেরি হতে পারে’, ‘পলাতক পেন্ডুলাম’, ‘ক্যাঙ্গারুর বুকপকেট’, ‘পিরামিড সংসার’, ‘জারুলতলার কাব্য’, ‘চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুন্ডহীন, উপন্যাস ‘খসড়া সম্পর্ক’। গবেষণা ‘উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলা কাব্যের গতিপ্রকৃতি’।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন : জুননু রাইন

যুগান্তর : প্রথম লেখা ছাপা হওয়ায় কেমন লেগেছিল এবং সে সময়ের সাহিত্যের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাই।

ময়ুখ চৌধুরী : ক্লাস সিক্সে (১৯৬২) থাকতে লেখালেখির শুরু। ক্রমশ লেখার পরিমাণ বাড়তে লাগল- লেখার মান সম্পর্কে তখন ধারণা ছিল না। ছড়া, রূপকথা, গোয়েন্দা গল্প- এ সবই লিখতাম। পরের বছর একটা নাটিকাও প্রায় লিখে ফেলেছিলাম।

ক্লাস এইটে (১৯৬৪) হাতে লেখা চার চারটা বই লিখলেও তখন পর্যন্ত কোথাও লেখা পাঠাইনি। এক বন্ধু জানাল লেখা ছাপাতে গেলে (ছোটদের পাতায়) আগে সভ্য হতে হয়। সভ্য বা সদস্য হলাম। চিঠি লিখে জানতে চাইলাম বড়দের পাতায় লিখতে গেলে বিশেষ কোনো নিয়ম আছে কিনা। ছোটদের পাতায় জবাব এলো- ‘ভাই, তোমার বয়স কত?’

অতএব, আমি ছোটদের পাতাতেই লেখাটা পাঠিয়ে দিলাম, যার শিরোনাম ‘আমাদের সাহিত্য পাঠক’। দু’দিন বাদেই দেখি, ‘রোববারের সাহিত্য’ পাতার প্রথম লেখার জায়গায় আমার নামসহ ওই প্রবন্ধটি জ্বলজ্বল করছে। বাবাকে ভীষণ ভয় পেতাম।

দ্বিতীয় কাউকে পেলাম না, যাকে দেখিয়ে লেখা ছাপা হওয়ার আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নেব। সাহস বেড়ে গেল।

‘রানী খালের সাঁকো’ (আহসান হাবীব) নামের একটি শিশুতোষ উপন্যাস পড়ে ভালো লেগেছিল। বইটার সমালোচনা লিখলাম। সোজা পাঠিয়ে দিলাম তদানীন্তন ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার অব পাকিস্তান’, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘বই’ জার্নালে। অবিলম্বে দাড়ি-কমাসহ পুরো লেখাটাই ছাপা হয়ে গেল।

১৯৭৩ সালে কবি আহসান হাবীবের সঙ্গে পরিচয় হল। একপর্যায়ে তাকে জানালাম- আমিই সেই সমালোচক- ‘আনোয়ারুল আজিম’। তিনি অবাক হলেন, বললেন- ‘সে তো অনেক আগে লেখা! আচ্ছা ভাই, তোমার বয়স কত- বল তো।’ সেই সপ্তাহেই ‘দৈনিক বাংলা’য় আমার কবিতা ছাপা হয়ে গেল। পরের সপ্তাহেই (সম্ভবত) প্রবন্ধ।

এর আগেই ঢাকার অন্যন্য পত্রপত্রিকায় আমার কবিতা (এবং একাধিক ছোটগল্প) ছাপা হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক ও শহীদ কাদরীর সঙ্গে পরিচয় ছিল না। ২৬.৫.১৯৭৪ আমি ‘আবু কায়সার-সানাউল হক খান-ফরহাদ মজহার-মাহবুব সাদিক’ শিরোনামে একটা কবিতা লিখি। তখন পর্যন্ত ওদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না।

আবু কায়সার ছাড়া বাকি তিনজনকে আজও দেখিনি। তবুও, তাদের কবিতা যে ভালো লেগেছে, সেই আবেগটুকু প্রকাশ করতে পেরে আমি তৃপ্তি পেয়েছিলাম।

বয়সে সামান্য বড় আবুল হাসানকে নিয়ে আমি প্রবন্ধ লিখেছি, মুহাম্মদ নূরুল হুদার প্রথম বই নিয়ে আলোচনা লিখেছি। আজকাল কি ওরকম হয়?

যুগান্তর : আপনাদের সময়ে তো আপনারা আড্ডা দিতেন। সে সময়ের সাহিত্য আড্ডা আর এখনকার সাহিত্য আড্ডার মধ্যে গুণগত পার্থক্য কি দেখতে পান?

ময়ুখ চৌধুরী : সব কালেই কমবেশি আড্ডা জমত। এখনও আড্ডা হয়। চট্টগ্রামের নিরিখেই বলছি, আমরা খোশমেজাজেই আড্ডা দিতাম। নানা ধরনের বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক চলত- কোনো বই, কোনো লেখা, গানবাজনা, সিনেমা, ক্রিকেট- এমনকি প্ল্যানচ্যাট নিয়ে।

বেশিরভাগ তরুণ আড্ডা দিত দক্ষিণ নালাপাড়ার সাগর বাবুর চায়ের দোকানে। এক সময় আমাদের দু-একজন বন্ধু বয়োজ্যেষ্ঠ একজনের নেতৃত্বে আলাদা হয়ে গেল। বিশেষ একটা ব্যানারে গোষ্ঠীবদ্ধ হল, প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠান করে (২৩.১২.৭৩) নিজেদের প্রবল আবির্ভাব ঘোষণা করল।

গোষ্ঠীভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও আমাকে তারা বক্তা হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে আমি সব সময় দলাদলির বিপক্ষে ছিলাম। তা সত্ত্বেও ওদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় ছিল, আড্ডাও হতো। ৭৮ সালের শেষ দিকে আমি কলকাতায় চলে যাই। আমাকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সঙ্গ দিয়েছিলেন ওই গোষ্ঠীভুক্ত একজন- সৈয়দ ইকবাল।

৮৩ সালে ফিরে দেখি- যে যার মতো এক একটা দল করে এক একটা চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। কেউ কেউ অন্য কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে প্রতিবন্ধকরূপে ভাবতে লাগলেন। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি। আমি তখন থেকে আলগা হওয়া শুরু করলাম। তারপরও আমার বাসায় অনেকে আসত, নানা রকম গল্প হতো, ফাঁকে ফাঁকে কারও কারও সদ্য লেখা কবিতা।

ঢাকার অনেক কবিও এসেছিলেন, দলবেঁধেও এসেছিলেন, একাও। কোনো এক শুক্রবারে আল মাহমুদও এসেছিলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত একটানা আড্ডা চলেছিল- এমনকি খাবার টেবিলেও। বহু বিষয়ে তার সঙ্গে আমার মতান্তর হয়েছিল। ’৭৪ সালে শামসুর রাহমান দাওয়াত করে আমাকে আওলাদ হোসেন লেনের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রায় সাত ঘণ্টা কথাবার্তা চলেছিল। তরুণ-তরুণতর কবিদের কাব্যপঙ্ক্তি আমি আবৃত্তি করে শোনাচ্ছিলাম, তিনি অবাক চোখে তাকিয়েছিলেন।

জসীমউদ্দীন আর নীরেন চক্রবর্তীর পক্ষ নিয়ে তুমুল তর্ক করেছিলাম সেদিন। আমার মনে হয় (ভুলও হতে পারে), আমি যত আড্ডা দিয়েছি, যত রকমের আড্ডা দিয়েছি, সেগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের অনুকূল ছিল। পরচর্চা (নিন্দার্থে) করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।

যুগান্তর : অনেকদিন থেকেই সভা-সমাবেশে বা কবিতা পাঠের মঞ্চে যান না। নিজেকে এই গুটিয়ে রাখাটা কি কবির একান্ত চরিত্র? নাকি বাইরের পরিবেশটা তার পছন্দের অনুকূলে নয়?

ময়ুখ চৌধুরী : ভুলে যাবেন না, গুটিপোকা না হলে আমরা রেশম তথা রেশমি বস্ত্র পেতাম না। যা বলছিলেন, আমি আশির দশক থেকে সভা-সমাবেশে বা কবিতাপাঠের মঞ্চে সাধারণত যেতাম না। এমনকি পেশাগত সভা-সমিতি, সেমিনারেও পারত পক্ষে যেতাম না।

দেখুন, আমি মনে করি, কারও অসুবিধা সৃষ্টি না করে যার যার নিজের মতো জীবনযাপন করার অধিকার প্রত্যেক মানুষেরই থাকা উচিত।

কোনো কোনো সন্ধ্যায় আমি রেললাইনের পাশের চায়ের দোকানে গোবেচারার মতো বসে থাকি। রিকশাওয়ালা, সবজিওয়ালা, মাছ বিক্রেতাদের মুখর আড্ডা উপভোগ করি। তাদের আগ্রহ, দৃষ্টিভঙ্গি, রাসানুভূতি পরখ করি। আমি উপকৃত বোধ করি। আমি সচকিত হই যখন শুনি- ফরমালিনের কারিশমা তো শিখিয়েছে শিক্ষিত লোকেরাই।

যুগান্তর : আপনার কবিতার কাঠামো আধুনিক হলেও বক্তব্য বিমূর্ত নয়। আপনার প্রায় সব কবিতায়ই একটি ঘটনা বা গল্পের বুনন পাওয়া যায়। যা এখনকার সাহিত্য-ধারার প্রায় বিপরীত। আপনি যেভাবে লেখেন আর সচরাচর (আধুনিক কবিতা হিসেবে বিমূর্ততায় আচ্ছন্ন) লেখা কবিতার মধ্যে কোনটি পাঠকের জন্য ভালো এবং কেন?

ময়ুখ চৌধুরী : আমি মনে করি, আধুনিকতার সঙ্গে (কবিতায়) মূর্ত-বিমূর্ততার তেমন কোনো বিরোধ নেই। রবীন্দ্রনাথ প্রচুর বিমূর্ত কবিতা লিখেছেন, জীবনানন্দ-বুদ্ধদেব বসু অনেক মূর্ত কবিতা লিখেছেন, নীরেন চক্রবর্তীর অনেকগুলো কবিতায় গল্পের বুনন পাওয়া যায়, শক্তিও শেষদিকে এসে কট্টর দুর্বোধ্যতা পরিহার করেছেন।

দুর্বোধ্য কবিতা এক সময় (১৯৭২-৭৮) প্রচুর লিখেছি, এখনও মাঝে মধ্যে লিখি। কবিতা মূর্ত হোক, বিমূর্ত হোক, কিংবা দুর্বোধ্য- যাই হোক না কেন, কবিতার প্রতিটি চরণের মধ্যে ভাবগত আত্মীয়তা চাই, বিশেষ করে প্রথম ও শেষ পঙ্ক্তির মধ্যে। জীবনানন্দ বলেছেন, কবিতা অনেক রকম।

কথাটি সহজ, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য। পাঠকের জন্য কোনটি ভালো- এ জিজ্ঞাসার মীমাংসা পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলে কেমন হয়?

যুগান্তর : বাংলাদেশে কোন ধরনের/বিষয়ের কবিতা বেশি জনপ্রিয়? আপনার কোন ধরনের কবিতা পছন্দ? কোন ধরনের কবিতা পাঠককে বেশি সমৃদ্ধ করতে পারে?

ময়ুখ চৌধুরী : ইদানীং তোষণমূলক কবিতা বেশ চোখে পড়ছে। ‘সমৃদ্ধ’ শব্দটা একটু ঝাপসা লাগছে।

যুগান্তর : এখনকার কবিতা দুর্বোধ্য, নাকি কবিতা পড়তে পারা বা বুঝতে পারার মতো পাঠক কমে যাচ্ছে?

ময়ুখ চৌধুরী : ভালো কবিতার অন্যতম লক্ষণ হল : পড়তে গিয়ে ভালো লাগবে; বুঝতে পারা না-পারার প্রশ্নটা আসবে পরে। যেমন ধরুন, দূর একটি মেয়ে আসছে, স্নিগ্ধ, লাবণ্যময়, দেখে ভালো লাগল- অথচ তাকে চেনেন না, জানেন না, বেঝেন না। যখন জানতে পারলেন- সে ধুরন্ধর এক দুর্নীতিবাজের মেয়ে কিংবা সে নামকরা (?) এক সন্ত্রাসীর ছোট বোন, তখন কি আপনার ভালোলাগাটুকু উঠে যাবে?

আমি গণিতের অনেক সমীকরণ বুঝি না,- দোষটা কি আমার না সমীকরণের? কবিতা দুর্বোধ্য- অভিযোগটির বয়স সুস্পষ্টভাবে ১৩১ বছর।

রবীন্দ্রপ্রভাবিত কামিনী রায়ের ‘আলো ও ছায়া’ (১৮৮৯) গ্রন্থের ভূমিকায় হেমচন্দ্র বলেছেন- ‘আজি-কালিকার কবিতা বুঝিতে পারি না। কায়া ধরিতে পারি। ছায়া ধরিতে পারি না। অনেকটা ব্রাহ্মদেব ঈশ্বরের মতো।’ অথচ আজকের দিনে সহজবোধ্য কবিতার কথা উঠলে বিনা দ্বিধায় কামিনী রায়ের কবিতার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তা হলে তো দেখা যাচ্ছে, সময়ান্তরে দুর্বোধ্য কথাটাতেও ক্ষয় লাগে, ঘুণ ধরে।

যুগান্তর : বর্তমানে বাংলাদেশের সাহিত্যে ভালো লেখকের অভাব নাকি ভালো মানের পাঠকের অভাব?

ময়ুখ চৌধুরী : আমার মনে হয় সব কালেই ব্যাপারটা সমানুপাতিক। তা ছাড়া, ভালো লেখক যেমন ভালো পাঠক তৈরি করে, তেমনই ভালো পাঠকরাও ভালো লেখক তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

যুগান্তর : সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্যের কী উপকারে আসে? বর্তমানে বাংলাদেশে সাহিত্য পুরস্কারকে সাহিত্যের জন্য কতটুকু ভালো মন্দ বলবেন?

ময়ুখ চৌধুরী : অবশ্যই উপকারে আসে। পুরস্কারের টাকায় মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো বডির মেডিকেল চেকআপ করানো যায়। পরবর্তী প্রশ্নের জবাব কোনো একদিন দেব।

যুগান্তর : বর্তমানে বাংলাসাহিত্যের দশক বিভাজনকে কীভাবে দেখেন?

ময়ুখ চৌধুরী : আমি দশকওয়ারি সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি না। এর বিরুদ্ধে কবিতাও লিখেছি। এটা পশ্চিমা রোগ- দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে এ ধারণার উন্মেষ ঘটেছে। আচ্ছা, জসীমউদ্দীন কোন দশকের কবি?

যুগান্তর : সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখতে নিজেদের সংস্কৃতিচর্চা জরুরি, না বিদেশি সংস্কৃতি ঠেকানো জরুরি? বর্তমানে বাংলাদেশে এ বিষয়টি কীভাবে মোকাবেলা হচ্ছে বা কীভাবে মোকাবেলা করা উচিত?

ময়ুখ চৌধুরী : কালচারাল প্রটেকশান নিয়ে ৩০-৩৫ বছর আগে একটা নিবন্ধ লিখেছিলাম। তখন বলেছিলাম- বিদেশের সংস্কৃতিকে আমরা ড্রইংরুমে বসতে দেব, কিন্তু বেডরুমে ঢোকাব না।

বিশ্বায়ন বলুন, মুক্তবাজার অর্থনীতি বলুন, ভূ-রাজনীতি বলুন- এগুলোর প্রভাবে কোনো দেশ বা কোনো জাতিগোষ্ঠীই/বিশুদ্ধভাবে নিজেদের সংস্কৃতি শতাংশ বজায় রাখতে পারবে না। তা ছাড়া, কৌটিল্যের মাৎস্যন্যায় তত্ত্ব তো বলেই দিয়েছে- বড় মাছ ছোট মাছকে খাবেই। ব্যাপারটা মোকাবেলা কীভাবে করা যায়- এটা নিয়ে সেমিনার করার অবকাশ রয়েছে।

যুগান্তর : এখানে গুরুত্বপূর্ণ লেখকরা কী কম আলোচিত? যদি সেটি হয়, তাহলে কী কী কারণে হচ্ছে? এমন তিনটি সমস্যার কথা উল্লেখ করুন

ময়ুখ চৌধুরী : এ জন্য প্রথমত প্রিন্ট মিডিয়া দায়ী। কোনো কোনো পত্রিকায় দেখা গেছে, বিচারপতি বা অঙ্কনশিল্পী- যা-ই লিখেছেন, কবিতা হিসেবে পরের শুক্রবারেই তা ছাপা হয়ে যায়। অনেকটা ভালো ফুটবল খেলার কারণে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পুরস্কার পেয়ে যাওয়ার মতো। চিন্তার বিষয় হল : যে ছেলেটি মনে মনে কবিতা লেখার কথা সদ্য ভাবতে শুরু করেছে, সে তো মনে করবে- এরাই মডেল পোয়েট, এগুলোই মডেল কবিতা। তবে মিডিয়ার প্রভাব যে দীর্ঘদিন থাকে না, তা তো দেখা যাচ্ছে এবং যাবেও। একা আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দীনকে দোষ দিয়ে লাভ কী?

যুগান্তর : বাংলাভাষার কোন গ্রন্থগুলো অন্য ভাষায় অনুবাদ হওয়া দরকার মনে করেন?

ময়ুখ চৌধুরী : শিল্পতাত্ত্বিকভাবে বিচার করলে এক রকম উত্তর; বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করলে অন্য রকম। দেখবেন, গ্রন্থ বাছাইয়ের সময় বিচিত্র রকম দৃষ্টিভঙ্গি এসে ভর করবে। পরিস্থিতি জটিল হবে।

যুগান্তর : দীর্ঘ সাহিত্যচর্চার পথে এমন একজন সাহিত্যিক বন্ধুর কথা জানতে চাই যে নানাভাবে আপনার লেখকসত্তাকে সক্রিয় থাকতে সহযোগিতা করেছে।

ময়ুখ চৌধুরী : সাহিত্য জগতে আমি এতিমের মতো বড় হয়েছি।

লেখালেখির ক্ষেত্রে আমি কোনো মুরব্বির দোয়া (!) পাইনি। ‘আমার লেখকসত্ত্বাকে সক্রিয় থাকতে সহযোগিতা’ যে করেছে, সে একটি মেয়ে, এখন বেঁচে নেই; সে কোনোদিন আমার কোনো লেখা পড়েছে কিনা- তাও জানি না। সে-ই আমার প্রেরণা।

পক্ষান্তরে, আমি উপকারী পরামর্শ কাকে না দিয়েছি। আমার এই পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে ছড়াকার সুখময় চক্রবর্তী একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। আমি তার কাছে ঋণী।

যুগান্তর : আগে জেলা-উপজেলা এমনকি পাড়া-মহল্লাতেও সরকারি বেসরকারি লাইব্রেরি সক্রিয় ছিল। এমন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণ এবং এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায়গুলো কী?

ময়ুখ চৌধুরী : এখনও মনে আছে। সেভেনে থাকতে (১৯৬৪) ওয়ার্ড কমিশনারের পাঠাগারে গিয়ে আউট বই পড়তাম। একটা বই পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। সংরক্ষণে সংগৃহীত রাখার জন্য দোকানে কিনতে গিয়ে বইটা পাইনি। পরে আমি হাতে লিখে গোটা বইটা কপি করে নিয়েছিলাম। একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (বেশ পড়ুয়া এবং লেখেনও) আমাকে জানিয়েছেন, ও রকম পাঠাগারব্যবস্থা এখন নেই বললেই চলে। তিনি স্বউদ্যোগে সন্দ্বীপে, আনোয়ারায় এবং চন্দনাইশে পাঠাগার করে দিয়েছিলেন।

আজকাল কিশোর এবং অনতিতরুণরা গ্যাংবাজিতে যুক্ত হয়ে নানা ধরনের অপকর্ম করছে। এ জন্য ক্ষমতালিপ্সু শক্তিগুলো দায়ী। শাহ আবদুল করিমের গানটা (আগে কী সোন্দর) বারবার খোঁচা দেয়। এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা।

যুগান্তর : যাদের লেখা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, জীবিত এমন তিনজন লেখকের নাম-

ময়ুখ চৌধুরী : বদরুদ্দীন উমর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আবুল কাসেম ফজলুল হক।

যুগান্তর : একজন অগ্রজ ও একজন অনুজ লেখকের নাম বলুন, যারা বাংলাসাহিত্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

ময়ুখ চৌধুরী : আবুল হাসান এবং সলিমুল্লাহ খান- যদিও তিনি ইদানীং বিদেশি পটভূমিনির্ভর নিরাপদ বিষয়ের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।

আরও সংবাদ
© ২০২৩ | সকল স্বত্ব সকাল নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক সংরক্ষিত
DEVELOPED BY RIAZUL