সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জে একশ’ কোটি টাকা মূল্যের কয়েক শত বছরের প্রাচীন দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এই দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার করে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং পূজা উদযাপন কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা।
বুধবার দুপুর দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এই কর্মসূচীতে অংশ নেন।
দুপুর একটা থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচীতে এসে যোগ দেন। এসময় বঙ্গবন্ধু সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেন হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ। দুইটায় শুরু হয় মানববন্ধন কর্মসূচী।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক সাহার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নীল চন্দ্র ভৌমিক।আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শীল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনসহ অন্যান্য নের্তৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে স্মারকলিপি পাঠ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদ্বীপ কুমার দাস। বক্তারা বলেন, নগরীর দেওভোগ আখড়া এলাকায় রাজা লক্ষীনারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির নামে কয়েক শত বছরের একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। লক্ষাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য পবিত্রতা ও শুদ্ধতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে এই মন্দির।
মন্দিরটির পাশে জিউস পুকুর নামে প্রায় চার একর জায়গার একটি প্রাচীন পুকুর রয়েছে, যার বর্তমান মূল্য প্রায় একশ’ কোটি টাকা। শত শত বছর ধরে হিন্দু ধর্মালম্বীরাসহ স্থানীয় অধিবাসীরা দৈনন্দিন কাজে এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে আসছেন। এই মন্দির ও জিউস পুকুরসহ বিপুল পরিমান দেবোত্তর সম্পত্তিটি শত বছর ধরে দেখভাল করছে মন্দিরের সেবায়েত ও মন্দির কমিটি। ভুমি জরিপের সিএস (বি্িরটশ) পর্চায় এই সম্পত্তিটি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবেই রেকর্ডভুক্ত হয়।কিন্তু পঁচাত্তুরের পর স্থানীয় একটি চক্র জিউস পুকুরটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে। বিভিন্ন সময় জাল ও নকল দলিল তৈরি করে দখলের চেষ্টাও করা হয়। বক্তাদের অভিযোগ, পঁচাত্তুর পরবর্তী সময় থেকে এই দেবোত্তর সম্পত্তি গ্রাস করতে অপচেষ্টা শুরু করেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পরিবার।
দখলের জন্য যে সব নকল ও জাল দলিল তৈরি করা হয়েছে তাতে মেয়র আইভীর মা এবং দুই ভাইসহ নিকট আত্মীয়-স্বজনদের বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে।এই দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার জন্য মন্দিরের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। তবে মামলার বাদিসহ সংশ্লিষ্টদের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী নিজে ডেকে নিয়ে এবং লোক মারফত ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।মানববন্ধন শেষে নের্তৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা স্মারকলিপিটি জেলা প্রশাসকের কাছে উপস্থাপন করেন।
স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিন জানান, যথাশীঘ্র এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করা হবে। দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে চলমান বিরোধ আইন মোতাবেক সমাধান হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।