সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
‘দশের লাঠি একের বোঝা’ প্রবাদটির অনন্য উদাহরন গড়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। গত ১২ জুলাই বন্দরে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উন্নয়নের জন্য সরকারী ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৫০ লাখ অনুদান ঘোষণা করেন। যার মাত্র ১ সপ্তাহ পরে নিজের ঘোষিত পরিমানের থেকে অধিক টাকা সংগ্রহ করে উদাহরন সৃষ্টি করেছেন তিনি । এদিন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের সহযোগীতায় ৪৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং টিআর কাবিখা প্রকল্প থেকে ১৫ লাখ টাকা সহ মোট ৬৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার তহবিল গঠিত হয়েছে। এ সময় এমপি সেলিম ওসমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়নের জন্য তহবিলটি ১ কোটি টাকায় উন্নীত করনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এই মুজিব বর্ষের মধ্যে ১০০ শয্যা হাসপাতালে পরিণত করার ঘোষণা দেন। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জের ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালকে ৩০০ শয্যায় এবং খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার ১৯ জুলাই বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়ন নিয়ে মত বিনিময় সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা ব্যক্তিগত ভাবে যার যার স্বার্থ অনুযায়ী কমপ্লেক্সটি উন্নয়নের জন্য অর্থ সহযোগীতা প্রদান করেন। যার মধ্যে জেলা সেচ্ছাসেবক পার্টির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ৫ লাখ, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান ৫ লাখ, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন ৫ লাখ, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ৫ লাখ, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ ৫ লাখ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম ৫ লাখ, ব্যবসায়ী চান মিয়া ৫ লাখ, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন ৩ লাখ, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু ১ লাখ, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু মিয়া ৩ লাখ, ১৯নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি পলি বেগম ১ লাখ, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল আহম্মেদ সাগর ৩ লাখ, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম নবী মুরাদ ১ লাখ, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান ১ লাখ, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন ১ লাখ, বন্দর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা ইসলাম শান্তা ৫০ হাজার এবং একজন আনসার সদস্য ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। যার মোট পরিমান ৪৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর সাথে সরকারী বরাদ্দ টিআর কাবিখা প্রকল্প থেকে আরো ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন এমপি সেলিম ওসমান। যা নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট তহবিলের পরিমান দাড়িয়েছে ৬৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সেই সাথে বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল উপজেলা কমপ্লেক্সের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ৩২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে দেওয়া ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষা নিয়ে কাজ করেছি। কতটুকু করতে পেরেছি তার প্রমান আপনাদের সামনেই রয়েছে। সুচিকিৎসা নিয়ে হয়তো আমাদের কিছু গাফলতি ছিল। আমাদের ভূল স্বীকার করতেই হবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে আস্থা হারিয়ে গেছে। সব জায়গায় দালাল চক্র। হাসপাতাল থেকে রোগী ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের একজন দুর্নীতিবাজের বিচার চাইলাম। তাকে রাজশাহীতে বদলী করে দেওয়া হলো। আমি এ ঘটনার তদন্ত সহ বিচার দাবী করছি। নারায়ণগঞ্জের মানুষের পরিশ্রমের টাকা কেউ আত্মসাত করে নিয়ে যাবে তার বিচার হবে না এটা হতে পারেনা। আমরা প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। উনার কাছে হাত পাতবো। নারায়ণগঞ্জের সদর এবং বন্দরের একটি মানুষও যাতে সুশিক্ষা এবং সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয় আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি আগামী ৬ মাসের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব নিবো। আমি যদি দেশে নাও থাকি তবুও ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মাসিক সভায় অংশগ্রহন করবো। আপনাদের সকলের সহযোগীতা নিয়ে এই মুজিব বর্ষের মধ্যে আমি বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ১০০ শয্যা হাসপাতালে পরিণত করবো। পাশাপাশি সিভিল সার্জন আমাকে জানিয়েছেন ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের ভবনটি ৩ তলা হলেও সেটি ৮ তলা ফাউন্ডেশন দেওয়া আমরা সেটাকেও উর্ধমুখী সম্প্রসারন করে ৩০০ শয্যায় পরিণত করবো। এদিকে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালটিও প্রধানমন্ত্রী ৫০০ শয্যা অনুমোদন দিয়েছেন। সেটির কাজ নানা জটিলায় আটকে রয়েছে। আমরা সেখানে ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় সাড়ে ৫ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গায় ৬ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করবো। যাতে করে সেখানে করোনা রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা নিতে পারে। কেউ যেন অভিযোগ করতে না পারে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পাইনি।
সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা রোগের কোন চিকিৎসা নাই। কিন্তু আপনারা নিজেরা একটু সাবধান থাকলে এই ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আপনারা বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুবেন। বাসার বাহিরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করবেন। গরম পানি দিয়ে গারগেল করবেন। নিজে বাচুন আপনার পরিবারকে বাচান এবং আশেপাশের মানুষকে বাচতে সহযোগীতা করুন। আমরা অনুরোধের প্রেক্ষিতে বন্দর খেয়াঘাটের দুই পাড়ে খান মাসুদ এবং দিদার খন্দরকার গত ৩দিন ধরে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে মাস্ক বিতরন করছেন এবং তাদেরকে সচেতন করছেন। এমন করে যদি প্রতিটি জনপ্রতিনিধি এবং দল মত নির্বিশেষে সকল দলের নেতাকর্মীরা দায়িত্ব দেন তাহলে আমাদের রেড জোন নারায়ণগঞ্জ খুব অল্প সময়ের মধ্যে গ্রীণ জোনে পরিণত হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উন্নয়ন এবং মানুষকে সেবা করার মাঝে কোন প্রকার রাজনীতি আনি নাই। আজকের এই মত বিনিময় সভা সেটিরই প্রমান। আজকে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি সব দলের নেতারাই এই মঞ্চে উপস্থিত আছে। কিন্তু এই করোনা মহামারির সময় কিছু মানুষ অপরাজনীতিতে লিপ্ত রয়েছেন। কেউ কেউ আমার মৃত্যু কামনা করছেন। আমি মরলে তারা এমপি হবেন। আবার একজন শ্রমিক নেতাকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বলে পাগলের মত বক্তব্য রাখছেন। আসলে তারা পাগল হয়ে গেছে। আমার দাদা বাবার মত আমাদের পরিবারের সবাই নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ভালবাসতে চাই। আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো মানুষের উপকার করবে। আমার বিশ্বাস বন্দরের মানুষকে আমি যা বলবো সেটি তারা দলমত নিবিশেষে সবাই শুনবে। কারন আমি বন্দরকে ভালবাসি বন্দরের মানুষও আমাকে ভালবাসে।
সেলিম ওসমান আরো বলেন, আমরা সবাই মিলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন করবো। আমরা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসবো। আমরা সব থেকে বেশি প্রয়োজন হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে। কারন শহর যদি নোংরা থাকে তাহলে রোগব্যাধি বেশি ছড়াবে। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের স্বার্থে নারায়ণগঞ্জের জনগনের মঙ্গলের জন্য আমরা সবাইকে নিয়ে এক টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে পরিকল্পনা নিয়ে ভবিষ্যতের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করবো।
জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম নারায়ণগঞ্জ থেকেই করোনা শর্নাক্ত হয় এবং এই বন্দর থেকেই যেটার শুরু আমরা করোনার হটপষ্টে পরিণত হয়ে ছিলাম। আজকে এই মহামারীর সময় নৈপথ্যে থেকে কাজ করেছেন আমাদের নারায়ণগঞ্জ-৫ ও ৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান। এমপি সাহেবের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সের কারনেই সারাবাংলাদেশে একমাত্র আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছি। আমি আশা করছি আমাদের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মহোদয় একটু সুদৃষ্টি দিলেই বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উন্নত হবে।
বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার মেহেরুবা আক্তার বলেন, এমপি মহোদয় ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ছিলো বলেই আমরা বন্দরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত ১৩৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। প্রবাসী তথ্য নিয়ে তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রেখেছি। মৃতব্যক্তিদের সৎকার করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের উপজেলায় ২২৫জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ১৮৪ জন সুস্থ্য হয়েছেন। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আলট্রা¯েœাগ্রাম মেশিন, প্যাথলজি, অপারেশন থিয়েটার, গ্যাস সংযোগ, নিরাপত্তার জন্য সিসি টিভি ক্যামেরা, ২৫০ কেভির একটি জেনারেটর সহ সকল কিছুর ব্যবস্থা রাখতে চাই। যাতে করে বন্দর থানা এলাকার কোন রোগীকে চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে না হয়।
বন্দর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা(ইউএনও) শুক্লা সরকার এর সঞ্চালনায় মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা।