সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
নাসরিন আক্তার//তোফাজ্জল হোসেন আর নেই।নেই মানে পৃথিবীর সমস্ত মায়া বন্ধন ছিন্ন করে চলে গেছেন।তিনি ছিলেন এমন একজন, যিনি কারো মৃত্যুসংবাদ শুনলে কলম তুলে নিতেন। লিখতেন স্মৃতিমুখর মুক্ত কলাম—”কিছু স্মৃতি কিছু কথা”। তাঁর লেখায় ফুটে উঠত স্নিগ্ধ স্মৃতি, হারানোর বেদনা আর জীবনের অর্থ খোঁজার এক গভীর অন্বেষণ।
কিন্তু আজ? আজ তো তাঁর জন্যই কলম ধরার সময়। আজ তো তাঁর জীবনের স্মৃতিগুলো তুলে ধরার পালা। কেউ কি লিখবে তার জন্য? তাঁর মতো গভীরভাবে অনুভব করতে পারবে কি কেউ? আজ তাঁর চলে যাওয়ায় যেন আকাশও ভারী হয়ে আছে। মনে হয়, প্রকৃতিও বুঝি থমকে গেছে।তোফাজ্জল হোসেন, আপনার হাত ধরে শিখেছি, মানুষের জীবনের গল্পগুলো লিখতে। আজ আপনার অনুপস্থিতিতে কলম থমকে গেছে। তবু প্রশ্ন জাগে, আজ কি কেউ লিখবে—”কিছু স্মৃতি কিছু কথা”? আপনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে নিম্ন লিখিত অংশটুকু বলা নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, দৈনিক ইয়াদ পত্রিকার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন আর আমাদের মাঝে নেই। জীবনের ৬৩টি বসন্ত পার করে ২০২৫ সালের জানুয়ারির শীতল ভোরে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।তাঁর মৃত্যুর সংবাদ নারায়ণগঞ্জের কাশিপুর মুন্সীবাড়ির ঐতিহ্যবাহী পরিবেশকে এক গভীর শোকাবহ সুরে ভরিয়ে দিয়েছে। তাঁর পিতা, প্রয়াত আলাউদ্দিন আহম্মেদ এবং মাতা, প্রয়াত জাহানারা বেগমের উত্তরাধিকারী তোফাজ্জল হোসেন ছিলেন সাংবাদিকতার জগতে এক জীবন্ত কিংবদন্তি।১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারি, কাশিপুর মুন্সীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তোফাজ্জল হোসেন। শৈশব থেকেই মেধা, বুদ্ধিমত্তা এবং লেখালেখির প্রতি তাঁর অসীম টান ছিল। পাড়ার পাঠশালা থেকে শুরু করে কলেজ জীবন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তিনি তাঁর প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন।তোফাজ্জল হোসেনের সাংবাদিকতার শুরুটা ছিল একটি ছোট্ট কলম দিয়ে। কিশোর বয়সে লিখিত কবিতা এবং ছোটগল্পগুলোর মধ্য দিয়েই তাঁর সৃজনশীলতার ছাপ পড়েছিল। পরবর্তীতে, সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা তাঁকে নিয়ে যায় জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক পত্রিকায়। তিনি ছিলেন নির্ভীক সম্পাদক, যাঁর প্রতিটি শব্দ ছিল সাহসিকতার প্রতীক।তাঁর কলামে প্রতিফলিত হতো সমাজের সত্য এবং বাস্তব চিত্র। ব্যক্তিগত জীবন ও গুণাবলি তোফাজ্জল হোসেন ছিলেন একজন দায়িত্বশীল পিতা, সহানুভূতিশীল বন্ধু এবং সমাজের জন্য নিবেদিত প্রাণ। ২০২৫ সালের ২রা জানুয়ারি, নিজের জন্মদিনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তাঁর অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী এবং নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ।
তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।