নির্বতনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বাতিলের দাবিতে আজ বিকাল ৫ টায় বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাসদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ সোনারগাঁ উপজেলার সমন্বয়ক বেলায়েত হোসেন, ফতুল্লা থানা শাখার সদস্যসচিব এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গতকাল জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিল পাশ হয়েছে। জনমত উপেক্ষা করে সরকার বিরোধীমত দমনের উদ্দেশ্যেই দেশে বিদেশে প্রবল বিরোধিতা সত্তে¡ও এ আইন করল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লেখক মুশতাককে জীবন দিতে হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজা গত ২ বছর ধরে জেলখানায় বন্দী। সাড়ে ৫ হাজার মামলা এখনো বিচারাধীন। যার একটি বড়ো অংশ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে।
ফলে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের দাবিতে দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘসহ দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও এই কুখ্যাত আইনটি বাতিলের সুপারিশ করেছে। দেশি-বিদেশী নানামুখী চাপে পড়ে সরকার এই দমনমূলক আইনটি বাতিল না করে পরিবর্তনের মাধ্যমে কৌশলে একই ধরনের নিবর্তনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রেমাত্র আইনটির ধারা জামিনযোগ্য করে, শাস্তির মাত্রা কিছুটা কমিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা পুলিশকে দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যম থেকে তথ্য উপাত্ত অপসারণ ও বøক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের হাতে এত ক্ষমতা আর কোন আইনে দেয়া হয়নি। যা বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে কিছু ধারায় শাস্তি শিথিল করলেও ডিএসএর মতো অপরাধের সংজ্ঞা অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে মতপ্রকাশ, ভিন্নমত, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা চর্চা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেমতো অপরাধ হিসেবে বিবেচনার করার সুযোগ রাখা হয়েছে। ডিএসএর মত সিএসএ-ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হবে। ধর্ম অবমাননার নামে বøাসফেমী আইনের ধারাটিও নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে থাকবে। আইনমন্ত্রী ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলছেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হবে না’। যেখানে আইনটিই অপআইন মানে নিবর্তনমূলক আইন, সেখানে তার প্রয়োগই তো অপব্যবহার ও দমনমূলক হতে বাধ্য। ফলে নতুন আইনের নামে এটি একটি আই ওয়াশ মাত্র এবং জনগণের সাথে চরম প্রতারণা।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমান সরকার আবারো ক্ষমতায় আসার জন্য ফন্দিফিকির করছে। ক্ষমতায় থেকেই জাতীয় নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। ফলে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের জনগণের যে লড়াই তাকে দমন করার জন্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছে। অতীতের স্বৈরশাসকদের মতই নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা ও বিরোধী মতকে দমন করার কাজে ব্যবহৃত হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে জনগণের জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। মানুষ এই ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসন থেকে মুক্তি চায়। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এবং ২০১৮ সালে গভীর রাতে ভোট ডাকাতি করে সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের বিরুদ্ধে অপশাসন চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল-২০২৩ এর নামে শ্রমজীবী মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ধর্মঘট করার অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে। গুম, খুন, হামলা, মামলা নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য বর্তমান সরকার তার অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসন করতে চাচ্ছে। ইতিমধ্যে আরপিও সংশোধন করে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে বর্তমান আওয়ামী সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করতে হবে। নির্বাচনে কালো টাকা, ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ সাইবার নিরাপত্তা আইন, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিলসহ সকল নিবর্তনমূলক কানাকানুনগুলো বাতিলের দাবিতে এবং বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের প্রতি আহŸান জানান।