জনগণের প্রতি সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের অর্জিত অর্থ দিয়েই সবার বেতন-ভাতা, আরাম-আয়েশ সব কিছু। কাজেই কাজ করতে হবে তাদের জন্য, তাদের স্বার্থে, তাদের কল্যাণে।
শনিবার (২৩ জুলাই) জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট আছে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। কাজেই জনগণের জীবন মান উন্নত করা- আমরা যারা দায়িত্বে আছি সবার দায়িত্ব, সবারই কর্তব্য।
সেই কর্তব্য পালন করবেন। সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য উদ্বৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতিতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে। ’ অর্থাৎ জনগণের সেবক, জনগণের খাদেম, জনগণের জন্য কাজ করা, জনগণের স্বার্থে কাজ করা, জনস্বার্থে দায়িত্বপালন করা। সেটাই আপনারা করবেন।
ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন জনগণের সেবক হিসেবে। আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫-এর পরের সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। যারাই যখন ক্ষমতায় গিয়েছে ভোগ বিলাসে আত্মনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ শোষিত-বঞ্চিতই থেকে গেছে। ২১ বছর পর সরকার গঠন করার সুযোগ পাই। আমার বাবার মতো আমিও ঘোষণা দিয়েছিলাম যে আমরা জনগণের সেবক।
‘জনগণের সেবা করাটাই আমাদের কাজ। ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়। কতটুকু দেশের জন্য করতে পারলাম, কতটুকু দেশের মানুষকে দিতে পারলাম সেটাই বিবেচ্য বিষয়। এভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। ’ বলেন শেখ হাসিনা।
ক্ষমতায় থাকাকালে জনমুখী প্রশাসন গড়তে তুলতে কাজ করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চেষ্টা করেছি যে আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাটা এমন ভাবে গড়ে উঠুক, যেটা গণমুখী হবে। জনগণের সেবক হবে, জনগণের জন্য কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নতুন ভাবে ঢেলে সাজিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চাই। যেন প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেকটা কর্মচারী, যেটা সংবিধানে সুনির্দিষ্ট আছে- তারা যেন যেখানে দায়িত্বে থাকবে সেই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা রাষ্ট্রকে উন্নত করতে হলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে হবে। একটা দিক নির্দেশনা থাকতে হবে, দিক দর্শন থাকতে হয়। তার জন্য একটা কর্মপন্থা প্রণয়ন, সেটা আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা এটাই লক্ষ্য।
‘তৃণমূলের যে মানুষগুলো তাদের আর্ত-সামাজিক উন্নতিই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আমাদের সরকার কাজ করে। ’ বলেন সরকার প্রধান।
‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উপলক্ষে এবারই প্রথমবারের মতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দেওয়া হলো ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক’। এত দিন এ পদকের নাম ছিল শুধু জনপ্রশাসন পদক।
এ বছর বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক পেয়েছে সরকারের বিভিন্ন দফতরের ২৭ জন কর্মকর্তা, তিনটি মন্ত্রণালয় এবং একটি ইউনিট।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মনোনীতদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সরকারি কর্মচারীদের উদ্ভাবনী ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সাল থেকে দেশে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস পালন করা হচ্ছে।