নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশ। প্রতিদিন সকাল থেকেই ট্রাফিক সদস্যরা জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রতিটি পুলিশবক্সে রয়েছে একটি করে রেকার। রেকারগুলো সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি অথবা বিকল হওয়া এমন যানবাহনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশ বক্সগুলোর পাশেই রাখা থাকে।
তবে নারায়ণগঞ্জে এর চিত্র একটু ভিন্ন। শহরের চাষাঢ়া,পঞ্চবটি, জালকুড়ি,শিমরাইল মোড়ে প্রতিদিন যে ইজিবাইক ও মিশুক আটক করা হয় সেগুলো শহরে প্রবেশের কারণে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় রেকার বিল। যদিও রেকারের ভুমিকা মিশুক আটকের বেলায় নেই তবুও জরিমানাটি রেকাল বিল বাবদ নেয়া হয়।
সারাদিনে কমপক্ষে শতাধিক ইজিবাইক বা মিশুক আটক করা হলেও কমপক্ষে ১০/১৫টি মিশুক থেকে আদায় করা জরিমানা বাবদ টাকার রশিদ দেয়া হয়না বলেও অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের বেশিরভাগ জ্যাম মিশুক ও ইজিবাইকের কারনেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
শহরে যাতে সহজেই ইজি বাইক প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য শহরে প্রবেশে কোন প্রকার বাধা নেই মিশুকের।
প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ শহরে ৩/৪ হাজার মিশুক ও ইজিবাইক প্রবেশ করে। সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহর মিশুকে সয়লাব হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১’শ থেকে দেড়শতাধিক মিশুক ট্রাফিক পুলিশ আটক করে। একেকটি মিশুক থেকে আদায় করা হয় ১৫’শ টাকা। ফলে প্রতিদিন রেকার বিল যা হওয়ার কথা বাস্তবে তার কোনো মিল নেই।
মিশুকগুলোকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আটকের জন্য ২০/২৫ জন কিশোরকে মৌখিক নিয়োগ দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। যে যতো বেশি মিশুক আটক করতে পারে সে ততোবেশি টাকা পায় বলেও অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে।
তারা শহরের মিশুকগুলা আটক না করে গলাচিপা,উত্তর চাষাঢ়া,মাসদাইর,কলেজ রোড, আমলাপাড়া,২নং গেইট এলাকার ভিতর থেকে মিশুক আটক করে রেকারে ধরে নিয়ে আসে।
নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহর তলী থেকে প্রতিমাসে ৭/৮ লাখ টাকা প্রতিমাসে সরকারী কোষাগারে রেকার বিল বাবদ টাকা জমা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা ট্রাফিক পুলিশ। তবে শুধুমাত্র মিশুকের রেকার বিল বাবদ জরিমানার অংকের পরিমান আরো কয়েকগুন হওয়ার দাবী করেছেন অনেকে।
নারায়ণগঞ্জ একটি ব্যস্ততম জেলা। জেলা শহরে যানজটের ঘটনা নিত্যদিনের। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় মিশুক, সিএনজি ও ভ্যানগাড়ি আটকের ঘটনা। তবে জেলা ট্রাফিক পুলিশের দ্বারা সব থেকে বেশি রেকার বিল আদায় করা হয় মিশুক থেকে। একটি মিশুক আটক হলে রেকার বিল বাবদ আদায় করা হয় দেড় হাজার টাকা।
তবে এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ২০/৩০টি মিশুক থেকে রেকার বিলের টাকা নেয়া হলেও সেই টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। রেকার বিলের রশিদ যে সমস্ত মিশুক চালকদের দেয়া হয়না ঐ টাকাগুলো ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং যে সমস্ত সিভিল লোকজনদের দিয়ে মিশুক আটক করানো হয় তাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারারাও অভিযোগ।
মিশুকগুলোকে আটকের জন্য জেলা ট্রাফিক পুলিশ বেশ কিছু কিশোরকে নিয়োগ দিয়েছে। ঐ সমস্ত কিশোরের কাজই হচ্ছে শহরের দুই নম্বর রেল গেট,ফলপট্টি, মন্ডল পাড়া ব্রিজ থেকে যাত্রী বেশে চাষাঢ়া ট্রাফিক পুলিশের কাছে নিয়ে আসা।
আর এর পরেই শুরু রেকারের নামে টাকা আদায়। অভিযোগ রয়েছে,শহরে অবৈধ মিশুক যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশের কোনো কঠোরতা নেই। শহরে মিশুক যাতে সহজ ভাবে প্রবেশ করতে পারে মূলত সেই ব্যবস্থা ট্রাফিক বিভাগ করে রেখেছে বলেও অভিযোগ একাধিক সূত্রের। শহরের চাষাঢ়া, দুই নম্বর রেলগেট এলাকাতেও মিশুক আটকের জন্য সিভিল লোকজনদের ব্যবহার করা অভিযোগ রয়েছে জেলা ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা মিলন জানান,অনেক আগেই শহরে যাতে কোনো ভাবেই রিক্সা, ইজিবাইক ও মিশুক প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য গভঃমেন্ট গার্লস স্কুলের সামনে পুলিশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিগত দুই বছর যাবৎ ঐ পুলিশ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে মিশুক ও ইজিবাইক পাল্লা দিয়ে শহরে প্রবেশ করছে। এছাড়াও খানপুর দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আসা মিশুকও শহরে প্রবেশ করছে দিনের পর দিন। মনে হয় জেনো শহরে মিশুক যাতে সহজেই প্রবেশ করতে পারে সেজন্যই ট্রাফিক বিভাগ ফাঁদ পেতে রেখেছে।
অপর একটি সূত্র জানায়,শুধু চাষাঢ়াই নয়,জেলার প্রতিটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিশেষ করে সাইনবোর্ড,শিমরাইল,মদনপুর,মদনগঞ্জসহ সর্বত্র ট্রাফিকের একই অবস্থা চলছে। মিশুক যাতে অবাধে চলাচল করে তাদের পালিত লোকজনদের হাতে ধরা পড়ে এজন্যই তারা মিশুকের ব্যাপারে নীরব ভুমিকা পালন করছেন তারা। জেলা ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে সাথে হাইওয়ে পুলিশও রেকার বিলের নামে কিছু যানবাহন আটকে উৎকোচ আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।