সকাল নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ শহরের আলোচিত পেশাদার জুয়াড়ি বড় ও ছোট শাহাজাহান। সারা বছরই শহরের রেলওয়ে স্টেশন এবং মাছঘাট ও শহরের বাস স্ট্যান্ডের আশেপাশে তারা বিভিন্ন জায়গায় বসায় জুয়ার আসর। তাদের জুয়ার আসরে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, বাংলা মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন প্রকার নেশার ব্যবস্থা করা হয়।
ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রেন, সড়ক ও নৌ পথে বড় বড় জুয়াড়িরা এসে শাজাহানের জুয়ার আসরে অংশগ্রহণ করে। জমে উঠেছে জমজমাট জুয়ার আসর। এদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হবে যেন, একেকটি মিনি ক্যাসিনো। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জমজমাট জুয়ার আসর, খেলা হয় লাখ লাখ টাকা। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে জুয়ারিদের জন্য রান্না করে খাবারের ব্যবস্থা করতে গ্যাসের চুলার ব্যবস্থা করেছে ছোট শাহাজাহান। এক ব্যক্তি দুটি ইলিশ মাছ নিয়ে সর্বদা পাহারায় থাকেন ।
বর্তমানে জুয়াড়িরা শহরের ১নং রেলগেইটের পিছনে মাছঘাট এলাকায়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট শাহজাহান ও বড় শাহজাহানের তত্ত্বাবধানে জুয়ার আসর চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি মাছঘাট থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কিছু জুয়াড়িকে আটক করে। জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সামান্য জরিমানা দিয়ে তারা আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে শহরের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে ও কেউ অফিস ভাড়া নিয়ে জমজমাট জুয়ার আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেই অভিযান তাই নতুন করে আবারও জুয়ার আড্ডা চলছে জমজমাট।
সরেজমিনে সোমবার মাছঘাট এলাকায় দেখা যায়, শাহজাহানের জমজমাট জুয়ার আসর চলছে। সাংবাদিক ছবি তুলতে গেলে বলেন ভাই ভাই এই দিকে আসেন ছবি তুলতে হবে না, ভাই আমরা বাস, ট্রাক স্টাফরা বসে সময় কাটাইতাছে। আমরা টুয়েন্টি নাইন ও কলব্রিজ খেলতাছি। আমরা গরীব মানুষ সময় কাটাই। আপনারা ছবি তুলে নিউজ করলে আমাদের পেটে লাথি মারা হবে ভাই। আমরা তো সব সময়ই এইখানে খেলি। থানা পুলিশ সাংবাদিক সবাই তো জানে। এসময়ে জুয়াড়ি বড় ও ছোট শাহজাহানের নেতৃত্বে দায়িত্বে থাকা সেলিম, মনির নামের দুই ব্যক্তি এসে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তারপর বলে ঠিক আছে আপনারা যানগা অফিসের সাথে যোগাযোগ করবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বড় শাহাজান ও ছোট শাহাজানের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি সংঘবদ্ধ বাস স্ট্যান্ডের পিছনে, রেল স্টেশনের পাশে ও মাছঘাটের পাশে রেলওয়ের খালি জায়গা দখল করে বাঁশ ও টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জুয়ার আস্তানা বানিয়ে জুয়ার আসর চালিয়ে আসছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে বড় শাহাজাহানের নেতৃত্বে জোয়ার আসছে চলছে।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়ও দীর্ঘদিন ধরে নানা কায়দায় চলে আসছিল মাদক ও জুয়ার আসর। কখনো বাসের ভেতরে আবার কখনো দুই থেকে তিন বাস রেখে মাঝে চলতো এই মাদক ও জুয়ার আসর। সেখানে প্রায় শতাধিক মানুষ নিয়মিত জুয়া খেলায় অংশ নিত এবং প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হয়।
আরও জানা যায়, শহরের এই জুয়ার আসরে বিভিন্ন স্থান থেকে যুবক থেকে শুরু করে মধ্য বয়সীরা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। প্রশাসন ট্যাকেল দেওয়ার নামে প্রতিটি জুয়ার আসর থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছেন সুশীল সমাজের পরিচয়ধারী এক শ্রেণীর অসাধু গোষ্ঠী। যাদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যরাও জুয়াড়িদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আনিসুর রহমান মোল্লা, ‘ঘাটে এখন আর আগের মতো জুয়া খেলা হয় না। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে বেশকিছু জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালানও করেছি। এছাড়াও র্যাব ও ডিবি পুলিশও কয়েবার অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে মামলাও দিয়েছিলো। কিন্তু তারা আবারও জামিনে বের হয়ে এসে নতুন জুয়া খেলা শুরু করে। ঠিক আছে আমি খবর নিতাছি। বড় শাহজাহান বা ছোট শাহাজাহান বুঝি না। যার নেতৃত্বে খেলা হবে তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে।’