সকাল নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু (বিবি রোড) সড়কের ফুটপাত আপাতত হকারমুক্ত হওয়ায় এই সড়কের যানজট প্রায় ৭০ ভাগ কমে গেছে। কিন্তু এখন অবৈধ পার্কিং ৩০ ভাগ যানজট সৃষ্টি করছে প্রতিদিন। বিশেষ করে বহুতল ভবন, মার্কেট, অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড এই যানজটে ভুমিকা রাখছে। একদিকে শহরের চাষাঢ়া খাজা মার্কেটের সামনে লেগুনা ও সমবায় মার্কেটের সামনে সিএনজি, ২নং গেইট এলাকায় ইজিবাইক, সিএনজির অবৈধ স্ট্যান্ড অন্যদিকে বহতল ভবন ও মার্কেটের সামনে অবৈধ পার্কিং যানজটে ভুমিকা রাখছে।
শহরে প্রায় প্রতিদিনই ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। অথচ পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। শহরের চাষাড়া থেকে জিমখানা মন্ডলপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের বঙ্গবন্ধু সড়কের দুপাশে রয়েছে অসংখ্যক বহুতল ভবন। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি ভবন ছাড়া কোন ভবনে নেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। আবার যে কয়েকটি বহুতল ভবনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে সেগুলো মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের জন্য নয়। ওই পার্কিং স্পেসগুলো বহুতল ভবনের আবাসিক বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ফলে ক্রেতারা তাদের গাড়ি মার্কেটের সামনে সড়কের উপর পার্কিং করে রাখে কেনাকাটা করতে যান। এতে ঘন্টার ঘন্টার ঘন্টা গাড়ি সড়কের উপর পার্কিং করা থাকে। আবার কেউ হাসপাতালে রোগী দেখতে বা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে চলে যান, গাড়িটি রাস্তার উপর রেখেই। বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইপাশে এমনভাবে পার্ক করা গাড়ির সংখ্যা দুইশোর কম হবে না। গাড়িগুলো দুই লেনের সড়কের একটি লেনের অধিকাংশই দখল করে থাকে। এর ফলে প্রায় সময়ই তৈরি হয় তীব্র যানজট।
নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশের ধারনা একটাই যে, হকার উচ্ছেদের পর শহরে যানজটের নেপথ্যে এখন ভূমিকা রাখছে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং। অন্যদিকে, শহরের উকিলপাড়া এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু হোসিয়ারি কারখানা। এ কারণে ওই কারখানাগুলোর সামনের বঙ্গবন্ধু সড়কে মালামাল লোড-আনলোডের জন্য গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। এই অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্ট যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। সম্প্রতি বিভিন্ন গনমাধ্যমে অবৈধ পার্কিংয়ের ব্যাপারটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে, প্রশাসন থেকে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় অনেক যানবাহনকে অর্থদণ্ড ও মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কমছে না অবৈধ পার্কিং নামে দূরারোগ্য এই সমস্যাটি৷ তবে জনসাধারনের অনেকেই বলেন, এই সমস্যার সমাধান কেবল হবে যদি প্রতিটি বহুতল ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়৷
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর এক নম্বর রেল গেইট বাস স্ট্যান্ড থেকে পায়ে হেটে চাষাড়া আসতে সময় লাগে বেশি হলে দশ মিনিট। অথচ অতটুকু রাস্তা বন্ধন বাসে চড়ে চাষাড়া আসতে সময় লেগে যায় প্রায় আধঘন্টারও বেশি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যানজট। বঙ্গবন্ধু সড়েকে এরকম তীব্র যানজট সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টার সময়ে আর সন্ধ্যার দিকে।
শুধু বঙ্গবন্ধু সড়কেই নয়, শহরের চাষাঢ়া থেকে শুরু করে প্রধান সড়কগুলোর পাশে অবস্থিত বহুতল ভবনগুলোয় কোনও ধরনের পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় গাড়িগুলো রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখা হয়। নিয়ম অনুযায়ী এসব যানবাহন থাকার কথা সড়কের পাশে অবস্থিত বহুতল ভবনগুলোর কার পার্কিংয়ে। কিন্তু এসব বহুতল ভবনগুলোর গ্রাউন্ড ফ্লোরে দোকান, রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড কিংবা বাণিজ্যক কার্যালয় থাকলেও, রাখা হয়নি পার্কিংয়ের কোন জায়গা। যার প্রভাব পড়ছে নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে। এ বিষয়ে রাস্তার উপর অবৈধভাবে পার্ক করা কোন গাড়ির চালককে জিজ্ঞেস করলে তারা উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন, পার্কিংয়ের জায়গা না পেলে গাড়ি রাখবো কোথায়?
নারায়ণগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (প্রশাসন) করিম শেখ বলেন, ‘আমাদের একার পক্ষে যানজট নিরসন সম্ভব নয়। যানজটের জন্য ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত চলাচল দায়ী। পুলিশের মাত্র ৮৫ জন সদস্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মতো অলিগলির শহরে অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’ অননুমোদিত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নগরে কীভাবে চলছে- জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এগুলো আটকে রেখে ডাম্পিং করার মতো কোনো স্থায়ী জায়গা আমাদের নেই। এ ছাড়া এটা আমাদের একার কাজ নয়। অবৈধ এসব যানবাহন বন্ধ করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনেরও। এই জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।’