সকাল নারায়ণগঞ্জ
রিক্সা এ দেশের মানুষের খুব প্রিয় বাহন। খোলামেলা বলে চলতে আরাম, খুব দুরে না হলে যে কোন গন্তব্যস্থানে যাওয়া যায় ভাড়াও অধিকাংশ সময় নাগালে থাকে, পরিবেশ দূষণ হয়না বললেই চলে, হাওয়া খেতে খেতে যাওয়া যায়। রিক্সা ভ্রমন কারো কারো কাছে রোমাঞ্চেরও বিষয় সব মিলিয়ে রিক্সা চড়তে পছন্দ করেন না এমন লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না।
তবে রিক্সায় চড়ার উল্টো দিকও আছে। যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে রিক্সাকেই চিহ্নিত করা হয়। যখন তখন দুর্ঘটনা, যত্রতত্র পার্কিং অতিরিক্ত ভাড়া হাকানো কিংবা রিক্সাওয়ালার দুর্ব্যবহারসহ আছে আরো নানা বিড়ম্বনা। এসব বিড়ম্বনার সাথে যোগ হয়েছে ব্যাটারি চালিত এক ধরনের রিক্সা।
এমনিতে নারায়নগঞ্জ শহরে অবৈধ রিক্সার সংখ্যা বৈধ রিক্সার তুলনায় তিন-চার গুণ। শহরের রাস্তাগুলোতে মোটর গাড়ির মতোই দাপট নিয়ে চলা হাজার হাজার মিশুক, অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও রিক্সার কারণে আগের চেয়েও বেড়েছে দুর্ঘটনা, যানজট। সাথে রিচার্জেবল ব্যাটারির কারণে বিদ্যুতের অপচয় ঘটছে। দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার পরিমাণ। অটো রিক্সার বৃদ্ধিও কারণে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। প্রতিদিনই শহওে এবং শহরের বাইওে কমপক্ষে যেসব দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় তার অধিকাংশ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অটোরিক্সার পরিমাণ বৃদ্ধি, অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক এবং অসাবধনতা।
অটোরিক্সা, ইলেকট্রিক ব্যাটারি মোটর চালিত সবুজ/হলুদ রঙের এই রিকশা গুলো এক প্রকার টিন দ্বারা মোটর/ব্যাটারি গুলো ঢেকে রাখে যাতে দেখা না যায়। সাধারণ রিকশার সাথে বাজার থেকে কেনা ব্যাটারি এবং ছোট মটর সংযোগকারী এসব রিক্সার আধিপত্য এখন নগরজুড়ে। এর ফলে পায়ের সাহায্যে প্যাডেল দ্বারা রিক্সা চালানো কষ্ট বিধায় রিক্সা চালকগণ ব্যবহার করতে উতসাহিত হচ্ছে এবং দ্রুতগামী বিধায় যাত্রীগণও আরোহনে সাচ্ছন্দ্য মনে করছে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এ ধরনের রিক্সার হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে লাইসেন্সধারী ৫ হাজার রিক্সার বাইরে লাইসেন্সবিহীন রিক্সার দৌরাত্ম্যও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বৈধ-অবৈধ রিক্সার সাথে যোগ হয়েছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা। আর এসব রিক্সা চালাচ্ছেন কিছু মৌসুমী রিক্সা চালক। যারা জায়গা না চিনলে ও অতিরিক্ত ভাড়া হাকাচ্ছেন। রাতদিন রিক্সার দখলেই থাকছে নগরীর সড়কগুলোর অধিকাংশ স্থান। দিনভর তীব্র যানজটে নাকাল থাকছে নগরবাসী। এত নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা ও পুড়ছে লাখ লাখ টাকার জ্বালানী। সড়কগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি রিক্সা চলাচল করায় রিক্সার নগরীতে পরিণত হয়েছে নারায়নগঞ্জ।
নগরীতে ব্যাটারী চালিত রিক্সার রমরমা ব্যবসা চলছে। এগুলো নগরীর রাস্তায় চলতে গিয়ে অহরহ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের আহতের সংখ্যা কম নয়। প্রতিদিন যাত্রীসহ চালকরা আহত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে নগরীতে চলাচলকারী ব্যাটারী চালিত রিক্সার ব্যবহার পরিবেশগত দূষণীয় কিনা এবং ব্যবহার অযোগ্য ব্যবহৃত ব্যাটারির বিভিন্ন পার্টসগুলো পরিবেশের জন্য ঝুকিপূর্ণ কিনা তা তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হিরণ বলেন, অবৈধ রিক্সা, অটোরিক্সার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সর্বদা চলমান। প্রতিদিনই অসংখ্য অটোরিক্সা ধরে জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অবৈধ প্যাডেল চালিত রিক্সা পাওয়া গেলে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।