সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
যানজটে নাকাল শিল্প ও বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা। অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় ভেঙে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা। পরিবহন সিন্ডিকেটের কাছে যেন অনেকটাই জিম্মি এ শহরের মানুষ।
বিভিন্ন মোড়ে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা আর যত্রতত্র বাস রাখার বিষয়ে ট্রাফিক প্রশাসনও যেন নিরুপায় তাদের কাছে।
নগরীর ওপর দিয়ে চলাচলকারী দুরন্ত, আনন্দ, শীতলক্ষ্যা, মৌমিতা, হিমালয়সহ বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস বিভিন্ন পয়েন্টে স্ট্যান্ড করলেও তাদের নেই কোনো বৈধ পারমিট। এমনকি বেশির ভাগ বাসেরও নেই ফিটনেস।
পাশাপাশি নগরীজুড়ে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা আর সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ডের ছড়াছড়ি থাকলেও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ট্রাফিক বিভাগ রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের বাস মালিক ও শ্রমিকদের কাছে যেন জিম্মি কয়েক লাখ মানুষ। শহরের অন্যতম সড়ক নবাব সিরাজদ্দৌলা রোডের (ফলপট্টি) অধিকাংশেরই দখলে থাকে বাস। এছাড়া ব্যস্ততম টানবাজার এলাকার প্রবেশ মুখও সন্ধ্যার পর থাকে বাসের দখলে। প্রায় দেড় লাখ মানুষ নদীর ওপার থেকে নগরীতে প্রবেশ বা বন্দরে আসার সময় এই বাসের জটে জিম্মি হয়ে থাকেন।
এছাড়াও শহরের চাষাঢ়া মহিলা কলেজের সামনে, ২নং রেলগেট ও ১নং রেলগেটে রয়েছে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড। শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও শহরের চাষাঢ়া মোড়, ২নং রেলগেট, জিমখানা এলাকায়, কালীরবাজার এলাকায় রয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এছাড়াও রয়েছে নিষিদ্ধ হিউম্যান হলার গাড়ির স্ট্যান্ড।
শহরে যানজটের প্রধান পয়েন্টগুলো হচ্ছে- নিতাইগঞ্জ মোড়, মণ্ডলপাড়া ব্রিজ, ২নং রেলগেট, নন্দিপাড়া মোড়, গ্রিন্ডল্যাজ ব্যাংক মোড়, নুর মসজিদ মোড়, পপুলার পয়েন্ট ও চাষাঢ়া চৌরাস্তা মোড়। চাষাঢ়ায় এলে পড়তে হয় মহাযানজটে। ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী বাস শহরে ঢুকছে, আবার শহর থেকে বাস ঢাকার উদ্দেশে বের হচ্ছে। এর সাথে ট্রাক, প্রাইভেটকার, সিএনজি, রিকশা ও মোটরসাইকেল রয়েছে।
শহরের সান্ত্বনা, সমবায় ও খাজা মার্কেটের ব্যবসায়ী এবং ফুটপাতের লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, রাস্তায় যানজট লাগে মানুষের স্বভাবের কারণে। এ মানুষগুলো হচ্ছে পরিবহন জগতের মানুষ। সকালে তারা বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের হন। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থেকে বের হয়েই বিভিন্ন পয়েন্টে বাস বা সিএনজি দাঁড় করিয়ে রাখেন।
বিশেষ করে মৌমিতা বাস শহরের চাষাঢ়া স্বান্তনার মার্কেটের সামনে যাত্রী উঠার আশায় গাড়ি দাড় করিয়ে এক বিশাল জাম সৃষ্টি করেন।
এতে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদেরর নিরব ভুমিকা পালন করতে দেখা যায়।
সিএনজিগুলোর একই অবস্থা। যাত্রীর জন্য রাস্তা দখল করে বসে থাকে। সাত সকালে রাস্তায় গাড়ি চলাচল কম থাকে বিধায় তখন বোঝা যায় না যে বাস, সিএনজি বা লেগুনা কিম্বা অটো কীভাবে রাস্তা দখল করে রাখে। আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে ঢাকাগামী বাসগুলো ২নং রেলগেট চত্বর ঘুরতেই যানজট লাগে। ট্রেন আসার সিগন্যাল পড়লে তো কথাই নেই। থমকে থাকা যানবাহনের সম্মিলিত কোরাসে পথচারীদের কান ‘ঝালাপালা’ হয়। এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া জানান, লকডাউনের আগে বলা হতো ফুটপাতের হকার বসা এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ট্রেনের কারণে শহরে যানজট সৃষ্টি হয়। কিন্তু করোনা কালের প্রায় ছয় মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পরেও যানজট ছিল। আর হকার উঠিয়ে দেয়ার পরেও যানজট থাকে আগের মতোই। যতদিন যত্রতত্র অবৈধ যানবাহনের স্ট্যান্ড, বহুতল ভবনগুলোর সামনে গাড়ি পার্কিং আর শহরের প্রাণকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থাকবে ততদিনই যানজটের কারণে এ অবর্ণনীয় দুর্দশায় ভুগতে হবে আমাদের।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের (টি-আই ১) করিম শেখ জানিয়েছেন, শহর যানজটমুক্ত করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে এবং পরিবহন মালিকদের সচেতন হতে হবে সবার আগে এবং ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।