সকাল নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অত্যন্ত শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ৩১শে জানুয়ারি রবিাবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলা নব নির্মিত ভবনের ৪তলা সেমিনার কক্ষে এ কার্যক্রম চলে।
এরআগে শনিবারও মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তাদের সন্তানরা প্রয়োজনীয় কাগজাদী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে উঁচু তলায় স্থান নির্ধারণ করায় সাক্ষাত দিতে এসে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদেরই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধাগণ।
উপজেলা প্রাঙ্গণে এবং সড়কের পাশে চায়ের দোকানে বসে থাকা একাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা হলে, তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে মনে হচ্ছে, এখন আরেক যুদ্ধ করতে হচ্ছে। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাসা থেকেই যেখানে বের হওয়া মুশকিল, সেখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধারাই কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকেও এসে ৪ তলায় উঠে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে।
তবে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা চাইলে স্থানটি নিচ তলার হল রুমেও করতে পারতো। যেহেতু সাক্ষাতকারে আসা সহ সাক্ষীগণ ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগণদের নিয়ে দুই শতাধিক এর বেশী হবে। শুধু নিজ ইজ্জত বাঁচাতে অনেকেই বাধ্য হয়ে উঠেছে।
কারণ বর্তমানে আমাদের অনেক কিছু বলার থাকলেও নিশ্চুপ থাকতে হচ্ছে। কতিপয় অভিযোগের জন্য এখন এতগুলো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও বিড়ম্বনার শিকার। শেষ বয়সে কারা আমাদের নিয়ে খেলছে তাদেরও বিচার হবে। তবে এটুকু বলতে চাই কিছু কুচক্রি মহল নিজ স্বার্থ আদায়ে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের নিয়ে একটি চক্রান্তে নেমেছে।
জানা গেছে, দুই দিন ব্যাপী চলমান এ কর্মসূচীতে ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়েছে।
জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধার স্ব-শরীরে উপস্থিতি এবং তাদের ৩ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষী সহ সনদপত্র ও যাবতীয় কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্যও ৩ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষী নেয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি বলেন, বিষয়টা দু:খজনক। তবে কষ্ট করে আসলেও সুন্দরভাবে তারা সাক্ষাতে অংশ নিয়েছে, এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
তাছাড়া আমরা উনাদের যতটুকু পেরেছি সহযোগীতা করেছি। কিন্তু নিচতলায় করলেও আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থাকে আসলে এজন্যই উপরে করা। যাতে করে কোন কেউ প্রভাব না খাটাতে পারে, তদবীর না করতে পারে।
যাচাই বাছাই বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের জন্য দুই দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও স্বচ্ছতার সাথে প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। এতে উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
গত দিনে ১৫০ মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৬ জন মৃত মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন। আগামী ২৬ মার্চ মন্ত্রী মহোদয় চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, সত্যি বলতে আমি নিজেও বলেছিলাম আমার অফিসের দুই তলায় অথবা নীচ তলার হল রুমে বসার জন্য।
কিন্তু সোনারগাঁ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহ কয়েকজন উপরে করার জন্যই সম্মতি জানায়, সেজন্য উপরে করা হয়েছে। তবে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে যাচাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কোন প্রভাব বিস্তার বা কোন অনিয়মের সুযোগ নেই।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ও যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম, যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ও জেলা প্রশাসকের পক্ষে জেলা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার-২ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, স্থানীয় এমপির পক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সংসদের সাবেক কমান্ডার সোহেল রানা, গ্রুপ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মালেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রতন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. ফরহাদউদজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম সহ অন্যান্যরা।