সেজান জুস (হাসেম ফুড প্রোডাক্টস) কারখানায় অগ্নিকান্ডের ২ বছর পুর্তিতে ৫৪ শ্রমিক-কর্মচারী নিহতের জন্য মালিকসহ দায়ীদের শাস্তি, নিহত-আহত শ্রমিকদের পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসারে আজীবন আয়ের মানদন্ডে ক্ষতিপূরণ প্রদান, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যর্থতায় জবাবদিহিতা ও শাস্তির দাবিতে আজ বিকাল ৫ টায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার দপ্তর সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, সেজান জুস কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত রহিমার স্বামী মোঃ সেলিম, নিহত রিপনের বড় ভাই ইয়াসিন প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাÐে কমপক্ষে ৫৪ জন শ্রমিক নিহত এবং কয়েকশত শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনার ২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও শ্রমিকদের এই নির্মম মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি না দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারসমূহকে ন্যায্য ক্ষতিপুরণ প্রদান না করা এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় স্কপের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ না করার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ঘটনার পরপরই আমাদের সংগঠন এবং স্কপের পক্ষ থেকে কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি করা হয়েছিল।
কিন্তু শ্রমিক আন্দোলনের দাবি উপেক্ষা করে কলকারাখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রীদের হাকডাক, নিহতদের স্বজনদের বাদ দিয়ে পুলিশের মামলা করার অতিতৎপরতা থেকে আমরা আশংকা করেছিলাম আদৌ দায়ীরা চিহ্নিত এবং শাস্তি পাবেন কিনা? এখন পর্যন্ত আমাদের আশংকা সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে সরকারি সংস্থাগুলির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি, গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের কাছে ভবন নির্মাণের ত্রæটিসহ অবহেলার দায় স্বীকার করার পরেও মাত্র কয়েকদিন ছাড়া তাদের কারাগারের অভ্যন্তরে থাকতে হচ্ছে না, অর্ধশতাধিক শ্রমিকদের পরিবারের স্বপ্নগুলি আগুনে পুরিয়ে শেষ করে নামমাত্র কিছু টাকা তাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেজান গ্রæপের মালিকরা শ্রমিকের রক্ত শোষণ আর জনগণের অর্থ লুটপাটের মহাউৎসব নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কলকারখানা পরিদর্শন সংশ্লিষ্ট যে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটিতে শ্রমিক পক্ষের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। বি.এম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে ফায়ার সার্ভিসের ১০ জনের অধিক কর্মী নিহত হলেও নির্লজ্জভাবে ডিপো মালিকদের দায় থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনাপ্রবাহ বিচারহীনতার আশংকাকেই দৃঢ় করছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, সেজান জুসের হত্যাকান্ডের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে সহায়তা এবং ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রাণহানি রোধ করতে করণিয় নির্ধারণে স্কপের পক্ষ থেকে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১৭ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১২ দফা সুপারিশসহ স্কপের ফ্যাক্ট ফান্ডিংস কমিটির রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে দাখিল কারা হয়েছে তা অবিলম্বে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের আই.এল.ও কনভেনশন ১২১ অনুসারে ক্ষতিপুরণ প্রদান নিশ্চিত করতে শুধু তৈরি পোশাক শিল্প নয় সকল ক্ষেত্রে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুির স্কিম (ইআইএস) চালু করতে হবে। নেতৃবৃন্দ, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার নামে ধর্মঘটের অধিকার হরণের অপচেষ্টা বন্ধ করার জোর দাবি জানান।
নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা বলেন, ৮ জুলাই সেজান জুস কারখানায় মিলাদ পরিয়ে শ্রমিকদের স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়। এটা তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। তাদের সারাজীবন সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল সেজান জুস কারখানার মালিক পক্ষের লোকেরা। দান অনুদান নয়, নিহতদের পরিবার সেজান জুস কারখানা কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ শািিস্ত এবং ন্যায্য ক্ষতিপুরণ দাবি করেন।
বার্তাপ্রেরকÑ