দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি কিংবা রাস্তায় কোনো যানবাহন হঠাৎ বিকল হলে সেগুলো উদ্ধারে ডাকা হয় রেকার। এর বিনিময়ে পুলিশ নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি ওই যানবাহনের মালিকের কাছ থেকে নেয়।
এ ছাড়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মিশুক ও রিকশা জব্দ করেও পুলিশ নিচ্ছে মোটা অঙ্কের রেকার ফি। অভিযোগ রয়েছে, এমন ‘রেকার হয়রানি’ থেকে রক্ষা পেতে ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহনের চালকরা বাধ্য হচ্ছে পুলিশকে মাসোহারা দিতে। প্রতি মাসে মাসোহারা থেকে আয় হওয়া প্রায় ৩ কোটি টাকা চাঁদা যায় একশ্রেণির অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার পকেটে।
পুলিশের এমন ‘মাসোহারা বাণিজ্য’ চলছে নারায়ণগঞ্জ নগরের পথেঘাটে।
নারায়ণগঞ্জ রিকশাচালক সংগঠনের তথ্য বলছে, নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ২২ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজারের মতো ইজিবাইক, মিশুক, রিকশা ও ভ্যান সরাসরি পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলছে। প্রতি গাড়ি থেকে মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে নেয় তারা। এর মধ্যে মাসোহারা করা প্রতি গাড়ি থেকে দৈনিক ২০০ টাকা হিসাবে মাসে ছয় হাজার টাকা এবং এর বাইরে মাসিক আরও দেড় হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।
২২ হাজার গাড়ির মধ্যে পাঁচ হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (৬ আসনের) রয়েছে। বাকি ১৭ হাজার গাড়ির মধ্যে দুই আসনের মিশুক, ব্যাটারি লাগানো রিকশা ও ভ্যানগাড়ি আছে।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের খানপুর মোড়, কালীরবাজার, চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবের সামনে, নগরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকা এবং ডিআইটি এলাকার করিম মার্কেটের সামনে কয়েকজন যুবকের আনাগোনা। রেকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপপরিদর্শকরা (এএসআই) ব্যাটারিচালিত এসব বাহন থেকে চাঁদা তুলতে ওই ১০ থেকে ১২ জন যুবককে নিয়োজিত করেছে। তাদের কাজ নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাটারিচালিত গাড়ি জব্দ করা। ওই গাড়ি প্রথমে নেওয়া হয় নগরের চাষাঢ়া ডাকবাংলোর পাশে খালি জমিতে। সেখানে গড়ে তোলা একটি টিনের ছাপড়া ঘরে বসে রেকার বিলের নামে রসিদ দিয়ে জরিমানা করা হয়।
আবার কিছু কিছু গাড়ি রসিদ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই টাকা রেকারের দায়িত্বে থাকা এএসআইদের পকেটে যায়। গাড়ি জব্দের কাজে নিয়োজিত যুবকদেরও দেওয়া হয় ওই টাকার কিছু অংশ।
এদিকে একটি গাড়ি ধরা পড়লে তাকে নূ্ন্যতম এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একবার জরিমানা করার পর পরের দিন আবারও জব্দ হতে পারে ওই গাড়ি। যতবার জব্দ করা হয় ততবার এক হাজার টাকা করে রেকার ফি হিসেবে জরিমানা গুনতে হয় চালককে। এই প্রক্রিয়া থেকে বাঁচতেই পুলিশের মাসিক মাসোহারার দিকে চলে যায় চালকরা।
ছয় আসনের ইজিবাইক চালাক নিলয় জানান, সম্প্রতি তার গাড়ি পুলিশের লোকজন ধরে। পরে এক হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়। এ জন্য তিনি পরের মাস থেকে দেড় হাজার টাকায় মাসোহারা ঠিক করেছেন।
মিশুকচালক ফারুক বলেন, ব্যাটারি লাগানো রিকশা পুলিশ ধরলে জরিমানা এক হাজার টাকা। এবাবে এক মাসে একাধিকবার পুলিশের হাতে গাড়ি জব্দ হলে কয়েক হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়। এর চেয়ে ভালো মাসিক চুক্তিতে চলে যাওয়া।
ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসিক ভিত্তিতে চুক্তির পর তারা পুরো নগরে নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারেন। এ জন্য তাদের স্টিকার দেওয়া হয়। এসব স্টিকারের অনেকগুলো আবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নামে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো স্টিকার দেওয়া হয় না। যে চালক মাসিক চুক্তিতে যায় তার মোবাইল নম্বর সংশ্নিষ্ট এলাকার এএসআইর ফোনে থাকে।
চালকরা বলেন, যেসব গাড়ি মাসোহারা করা সেগুলো পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়েই চলে। যারা মাসোহারা দেয় না তাদেরই জরিমানা করা হয়।
মিশুক চালকরা আরো জানান,জসিম নামের একজন লাইনম্যান অলিগলি থেকে মিশুক চালকদের মারধর করে রেকারে নিয়ে আসে। পরে তাদের গাড়ি ধরে এসআই এর মাধ্যমে রশিদ ছাড়া জরিমানা করা হয়।
মিশুক চালকরা বলেন এসআই শফিক,আবুল বাশার,হাসান,শহিদুল নারায়ণগঞ্জের অলি গলি থেকে গাড়ি ধরে নিয়ে এসে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে রশিদ ছাড়াই গাড়ি ছেরে দেয়। যেখানে সরকার ১৫০০ রাখার অনুমতি দিয়েছে সেখানে তারা কিভাবে ৫০০-১০০০ টাকা নিয়ে গাড়ি ছাড়ে তা কেও জানেনা। আজও কি এই টাকা সরকারি কোষাগারে প্রেরন করা হয় কিনা তা কারো জানা নেই এবং টাকা দিতে দেরি হলে কিংবা টাকা দিতে না পারলে একপর্যায়ে প্রচুর মারধর করে।
মিশুক চালকদের একটাই দাবি এই রেকার গুলো সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা হলে সব অপকর্ম ধরা পড়বে এবং সব টাকা সরকারি কোষাগারে যথাযথ ভাবে পৌছাবে।