সকাল নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক। যার অধিকাংশ ক্লিনিকে নিয়মমাফিক নেই চিকিৎসক, নেই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ও বৈধ কাগজপত্রও।
জেলাজুড়ে শতাধিক ক্লিনিক থাকলেও একটিতেও সরকারি অনুমোদন নেই। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে নামসর্বস্ব দন্ত চিকিৎসক দিয়েই এসব ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে।
চিকিৎসক হিসেবে কাজ করা অধিকাংশই ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণধারী অথবা হাতুড়ে চিকিৎসক। এসব ক্লিনিকে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
সরেজমিনে জেলা শহর ও শহরের বাহিরের একাধিক ডেন্টাল ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, জেলার অধিকাংশ ক্লিনিকে বিডিএস ডিগ্রিধারী সার্জন নেই। দক্ষ টেকনিশিয়ানও নেই। যাঁরা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাঁরাই দাঁত তুলছেন।
তাঁরাই আবার ফিলিং থেকে দাঁত বা মাড়ির যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করছেন। নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাবরেটরি। বিভিন্ন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের নাম ব্যবহার করে আকর্ষণীয় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এসব ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা নিজের নামের আগে ডেন্টাল সার্জন পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এদিকে জেলার সকল ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোকে নিবন্ধনভুক্ত হতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে , নারায়ণগঞ্জ শহরের চারপাশে প্রায় অর্ধশতাধিক ক্লিনিক রয়েছে। রোগীদের আকৃষ্ট করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের নামে টানানো হয়েছে আকর্ষণীয় ব্যানার ও সাইনবোর্ড। ভুয়া পদ-পদবি ও অভিজ্ঞতার তথ্য ব্যবহার করে তাঁরা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে সেবার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন।
এদিকে অনুমোদনহীন ১৯টি ক্লিনিক রয়েছে এগুলো হলো, মেট্রোহল চত্বরের সোহেল জেনারেল হাসপাতাল, খানপুরের আশশিফা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার,খানপুরের সম্রাট জেনারেল হাসপাতাল, চাষাঢ়া জাকির সুপার মার্কেটের লাইফ জেনারেল হাসপাতাল, মনির টাওয়ারে অবস্থিত ভিশন আই কেয়ার এন্ড ফ্যাকো সেন্টার,ডিআইটির জে এস সুপার মার্কেটের সহিতুন নেছা লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল, নাগবাড়ি এলাকার নারায়ণগঞ্জ ডায়বেটিক হাসপাতাল, শিবু মার্কেটের সেতু জেনারেল হাসপাতাল,সিদ্ধিরগঞ্জ কদমতলী পুল এলাকার কদমতলী জেনারেল হাসপাতাল, চিটাগাং রোড ডাচ বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল,সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাকের কনক জেনারেল হাসপাতাল,পঞ্চবটি চৌরাস্তার মেলোডি ডায়গনস্টিক সেন্টার, পঞ্চবটির মেরী স্টার জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব,গোদনাইল এস ও রোডের আধুনিক জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার,২ নং ঢাকেশ্বরী মেডিফ্যান ডিজিটাল ডায়গনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, রূপগঞ্জের ভূলতার হযরত শাহজালাল (রঃ) হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার, আড়াইহাজার বাজার ভূইয়া প্লাজার আড়াইহাজার জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রমতে, স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনে জন্য আবেদন করতে প্রয়োজন হয় ৪টি লাইসেন্স। এগুলো হলো-পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স। জেলা জুড়ে ১৫৯ টি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত রয়েছে। যার মধ্যে হাসপাতাল রয়েছে ৯৯টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫৬টি, ৪টি ব্লাড ব্যাংক। এর বাহিরে রয়েছে শতাধিক অনিবন্ধিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো অনলাইন লাইসেন্স গ্রহন কিংবা হালনাগাদ নবায়ন ও সঠিক নিয়মে আবেদন ব্যতীত রোগী ভর্তি, বিভিন্ন ধরনের অপারেশন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অবৈধভাবে সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে রয়েছে মুক্তি জেনারেল হাসপাতাল, রিজিয়া জেনারেল হাসপাতাল, মিতু ক্লিনিক, ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিক্যাল প্যাথলজি এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সোহেল জেনারেল হাসপাতাল, মেডিস্টার হাসপাতাল এন্ড রেনেসা ল্যাব। এছাড়াও সিভিল সার্জন বিভাগে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নেই প্রয়োজনীয় দপ্তরের ছাড়পত্র। ফলে ছাড়পত্র ছাড়া আবেদনকৃত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পত্র পায়না। তবে নিবন্ধনপত্র ছাড়াই তাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
সিভিল সার্জন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, প্রতিমাসে জেলা ব্যাপী অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমপক্ষে ৩-৪টি অভিযানের প্রয়োজন। এই অভিযান পরিচালনা করতে আমাদের জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। অবৈধ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়ে অভিযানের জন্য আমরা একাধিকবার উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করলেও সহযোগিতা পাইনি। ফলে এক মাসেও একটি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।