রাজধানীর মিরপুরে দেড় হাজার তিতাস গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ জালিয়াতির মূলহোতা ফারুক’কে চট্টগ্রাম হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিককালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র। জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এসব প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা তৎপর।
র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল র্যাব-৭ এর সহযোগিতায় সোমবার (৭ জুন) রাত ১ টায় দেড় হাজার তিতাস গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী জালিয়াতির মূলহোতা মোঃ ওমর ফারুক (৩২), কে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
২০১৮ সাল থেকে রাজধানীর মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ণ ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে এবং এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিলের টাকা সংগ্রহ করত। কিন্তু গত প্রায় ২ বছর ধরে ওমর ফারুক গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করে। গত জানুয়ারি ২০২১ এ মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। মাইকিং এর পরপরই ভুক্তভোগী গ্রাহকসমূহ প্রতারক ফারুকের ও তার প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টার্ণ ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ এর বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়ে এবং উক্ত ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে গ্রাহকদের মাঝে জানাজানি হলে গত ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ‘ইন্টার্ণ ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ সহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে সে সহ তার অন্যান্য সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়।
এ বিষয়ে কয়েকজন ভ‚ক্তভোগী মিরপুর মডেল থানায় গত ০২ ফেব্রুয়ারি মোঃ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। এর পরপরই র্যাব-৪ এর গোয়ান্দা দল উক্ত মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জালিয়াতির রাজা প্রতারক ফারুকের অবস্থান সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
মোঃ ওমর ফারুক (৩২) এর উত্থানঃ
মো ওমর ফারুক (৩২) নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানাধীন সাগরপুর গ্রামে জম্মগ্রহণ করে। সে স্থানীয় একটি স্কুল হতে ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করে ২০১৪ সালে ঢাকায় চলে এসে মগবাজার এলাকায় একটি বিকাশের দোকানে চাকুরী শুরু করে। অতঃপর ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যাবসা শুরু করে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে ০৫ টির অধিক একাউন্ট খোলে। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩ নং ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ণ ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। ওমর ফারুক তার এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করত। গত ২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ করে জমা না দিয়ে বিলের টাকা আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
ওমর ফারুকের প্রতারণা’র কৌশলঃ
এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনাঃ ২০১৮ সাল থেকে জালিয়াতির রাজা প্রতারক ওমর ফারুক মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের নিয়মিত গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করত। বিল সংগ্রহের সময় গ্রাহককে ব্যাংকের সিলসহ সংশ্লিষ্ট বিলের রশিদ সরবরাহ করায় সে ধীরে ধীরে গ্রাহকদের মাঝে বিশ্বস্ততা অর্জন করে। এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠায় পরবর্তীতে সে প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর বিল জমা করার নামে বিল সংগ্রহ করে জমা না করে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।
এমএলএম ব্যাবসাঃ সে ‘অটুট বন্ধন’ নামে একটি এমএলএম সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ জনগণকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের নিকট হতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাঃ সে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিকাশ, নগদ এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এর অনুরুপ বিল পরিশোধের জন্য ‘নব ক্যাশ’ নামক একটি সেবা চালু করে সাধারণ মানুষের নিকট হতে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়।
গ্রেফতারকৃত প্রতারক এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে এবং এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ মিরপুর মডেল থানায় পূর্বের দায়েরকৃত মামলায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। তার এই প্রতারণা কাজে অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।